শেরে বাংলা হলে দু’টি ব্লক রয়েছে। একটি ‘শ-ব্লক’, অপরটি ‘হাজার-ব্লক’। দুই ব্লকেই রয়েছে ‘রাজনৈতিক কক্ষ’ বা ‘পলিটিক্যাল রুম’। তবে হাজার ব্লকে ‘২০০৫ ও ২০১১’ নম্বর রুম দু’টি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতো বলে জানিয়েছেন হলের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৭ অক্টোবর) ও মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) শেরে বাংলা হলের বিভিন্ন কক্ষে সরেজমিন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের পাঁচটি পলিটিক্যাল রুম রয়েছে। তারা জানান, ২০০৫ ও ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে এনে কথিত অভিযোগের দোহাই দিয়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিনের নেতৃত্বে এখানে নির্যাতন চালাতেন তার অনুসারীরা।
জানা গেছে, তুচ্ছ সব ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করতেন হলের নেতারা। কুশল বিনিময়ের জন্য কোনও শিক্ষার্থী সালাম না দিলে বা নেতাদের আসতে দেখে পাশ হয়ে না দাঁড়ালেই তাকে টর্চার সেলে নেওয়া হতো। হলের সিনিয়ররা জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিতেন মারধর করতে। ফলে বাধ্য হয়েই অনেক জুনিয়র শিক্ষার্থী নেতাদের কথামতো কাজ করতেন। ইচ্ছে হলেই যাকে তাকে র্যাগিং দেওয়া হতো। র্যাগিংয়ের নামে যা ইচ্ছা তাই করা হতো। নেতাদের ভয়ে কেউ মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারতেন না।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সকাল নেই, রাত নেই, যে কাউকে ফোন করে চা, সিগারেট আনতে বলতেন। না গেলে বা দেরি হলে তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনার পর আবরার হত্যায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করেছি।’
২০০৫ নম্বর কক্ষে থাকতেন বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ইশতিয়াক হাসান মুন্না। এই কক্ষে তিনি একাই থাকতেন। কক্ষটি টর্চার সেল ছাড়াও পার্টি রুম হিসেবে পরিচিত। এই কক্ষের পাশের একটি কক্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই রুমে নিয়মিত ছাত্রলীগের নেতারা আড্ডা দেন। ছাত্রলীগের যেসব নেতা বুয়েট থেকে পাস করে গেছেন, তারাও এখানে এসে আড্ডা দেন।’
ওমর নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সবসময় জুনিয়র ব্যাচের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। জুনিয়র ব্যাচের সবাইকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হয়, না গেলে ওইসব রুমে নিয়ে আটকে রাখা হয়।’
হলে ছাত্র নির্যাতন ও টর্চার সেল থাকলেও সে বিষয়ে প্রভোস্ট ড. জাফর ইকবাল কিছুই জানতেন না। কোনও শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে কখনও তাদের কাছে অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন।
আরও খবর:
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি, সমর্থন শিক্ষক সমিতির
আবরার হত্যার বিচারসহ ৭ দফা দাবিতে উত্তাল বুয়েট
আবরারকে কোলে করে করিডোর পার করেন চারজন (ভিডিও)
বুয়েটে আবরার হত্যা: ছাত্রলীগ থেকে ১১ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যায় ৯ ছাত্রলীগ নেতা আটক
আবরার হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা
কাউকে পেটানোর নির্দেশনা কখনও ছাত্রলীগ দেয় না: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে’
আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ