প্রথম অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছে ওয়াহিদার

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমদিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের প্রথম অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম।

বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়টা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার। তিনি বলেন, আমরা প্রথম অস্ত্রোপচার শেষ করলাম। তার জন্য গঠিত দুটি মেডিক্যাল বোর্ডের সব সদস্য এখানে উপস্থিত ছিলেন।

অস্ত্রোপচারের সফলতা কতটুকু জানতে চাইলে বদরুল আলম বলেন, সেটা আগামীকাল না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না, তবে অস্ত্রোপচারে কোনও সমস্যা হয়নি, উনি ভালো আছেন।

ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, যখন প্রথম তাকে নিয়ে আসা হয় তখন ব্যান্ডেজ করা ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর দেখা যায় মাথায় মোট নয়টা আঘাতের চিহ্ন। একটা খুব বড়, যার ভেতর দিয়ে হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। বাকি আটটা ইনজুর ছিল। তার ভেতরে ছিল মাথার দুই পাশে তিনটা করে ছয়টি, মুখের উপরে একটা, নাকের উপরে একটা এবং চোখের নিচে একটা। ভেতরে ঢুকে যাওয়া হাড় বের করা হয়েছে, রক্তরক্ষণ বন্ধ করা হয়েছে। অন্য আঘাতগুলোও সব রিপেয়ার করা হয়েছে । আমার আশাবাদী, তবে এটা হেড ইনজুরি, ব্রেইনের ভেতরে রক্তক্ষরণের ব্যাপার। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন কিনা এখনই আমরা বলতে পারবো না। অন্তততাকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ রাখার পর বলতে পারবো।
তিনি শঙ্কামুক্ত কিনা প্রশ্নে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এখনই শঙ্কামুক্ত কথাটা আমরা বলবো না। আগে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ তার মাথায় আঘাত লেগেছে, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে ডান পাশ প্যারালাইজড ছিল সেটা আশা করি সচল হয়ে যাবে। তবে তাতে সময় লাগবে।

এর আগে দুপুরে ওয়াহিদা খানমকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও হাসপাতালের নিউরো সার্জারির অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ইউএনও’র অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার রক্তচাপ ও পালস স্বাভাবিক না হলে অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হবে। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, তার অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অপারেশনও করা যাবে না।

এর আগে ওয়াহিদা খানমকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে রংপুর থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

প্রসঙ্গত, বুধবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

আরও পড়ুন:

ইউএনও ও তার বাবাকে কুপিয়ে ‘মৃত ভেবে’ ফেলে রেখে যায় হামলাকারীরা

ইউএনও’র ওপর এমন হামলা বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ

ওয়াহিদার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে ওয়াহিদার

ইউএনও ওয়াহিদার সর্বোচ্চ চিকিৎসার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

এটা সিরিয়াস ক্রাইম: রংপুর বিভাগীয় কমিশনার