পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সারাদেশ থেকে ৪৮ জঙ্গিসহ দুই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান জানান, অভিযানের প্রথম দিন ৩৭ জঙ্গিসহ গ্রেফতার করা হয়েছিলো তিন হাজার ১৫৫ জনকে। দ্বিতীয় দিন গ্রেফতার করা হয় ৪৮ জঙ্গিসহ দুই হাজার ১৩২ জনকে।
অারও পড়তে পারেন: বেসরকারি তিন মেডিক্যাল কলেজ বন্ধের নির্দেশ
কামরুল আহছান জানান, শনিবার গ্রেফতারকৃত ৪৮ জঙ্গির মধ্যে ৪৭ জন জেএমবির ও একজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। অন্যরা বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বরগুনা, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী মহানগর, চট্টগ্রাম মহানগর থেকে জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে ২টি শ্যুটারগান, ১ রাউন্ড গুলি, ৫০০ গ্রাম গান পাউডার, ১৭টি ককটেল, ২টি ১২ বোরের বন্দুকের কার্তুজ, ৯টি চাপাতিসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র এবং বিপুল পরিমান উগ্রপন্থী বই উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া, গ্রেফতারি পরোয়ানা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও অন্যান্য মামলায় মোট ২ হাজার ৮৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানায় ১,৪৯৬ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ৪১ জন এবং মাদক উদ্ধার মামলায় ৩৯১ জন এবং অন্যান্য মামলায় ১৫৬ জন রয়েছেন।
পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া ও প্ল্যানিং বিভাগের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) একেএম শহিদুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। সব ধরনের অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে কোনও অপরাধীই যুক্ত থাকতে পারে।
আরও পড়তে পারেন: কে এই ওমর মতিন?
অভিযানে গ্রেফতারের তুলনায় ‘জঙ্গি’ কম, এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হচ্ছে তারা সবাই অপরাধী কি না, কোনও ধরনের অপরাধে তারা জড়িত কি না, সেটা দেখা দরকার। নিরপরাধ কেউ যাতে গ্রেফতার না হয়, সেটা মাথায় রাখতে হবে। শুধু যে জঙ্গি গ্রেফতার হতে হবে বিষয়টা এমন না। অভিযানটা সব শ্রেণির অপরাধীদের ধরতেই করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘যে কোনও ধরনের অপরাধীদের প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন কোনও আক্রমণাত্মক অভিযানে যাবে, তখন সাধারণ কিছু ড্যামেজ হবে। এটা ধরে রাখতে হবে। তবে কেউ যাতে উদ্দেশ্যমূলক হয়রানির শিকার না হয়, সেটা মাথায় রাখতে হবে।’
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে একই কায়দায় ৪৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। গত আড়াই মাসেই খুন হয়েছেন ১১ জন।
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। কেউ বলেছেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
সর্বশেষ চট্টগ্রামের জিইসি মোড়সংলগ্ন মিষ্টির দোকান ওয়েল ফুডের সামনে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রথমে ছুরি মেরে, পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপরই নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ ও বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণের ঘোষণা দেয় পুলিশ।
অন্যদিকে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ৬ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে ‘ছিনতাইকারী’ ও ‘জঙ্গি’ রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: ‘মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কেউই নেই, আমরা কি আকাশের সঙ্গে কথা বলবো?’
/এআরআর/এজে/ আপ-এমএসএম/