গুমরে কাঁদছে জুরাইন কবরস্থান

 

জুরাইন কবরস্থানে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনরানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা গুমরে গুমরে কাঁদছেন। কোনও একজন মা তার নিখোঁজ সন্তানের কবর মনে করে একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। আবার কোনও স্ত্রী তার স্বামীর কবর খুঁজছেন। কেউবা মায়ের এবং কেউবা বাবার কবর খুঁজছেন। কেউ এসেছেন কালো পোশাকে, কেউবা  ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে।

সোমবার সকালে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে এমন চিত্র দেখা গেছে।সবার চোখেমুখেই ছিল প্রিয়জন হারানোর ব্যাথা আর কান্না। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে জুরাইন কবরস্থানের পরিবেশ।মনে হচ্ছিল যেন গুমরে গুমরে কাঁদছে পুরো কবরস্থান।  

বিলকিছ আখতার নামে এক মধ্যবয়স্কা নারী রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় তার স্বামী হেমায়েতকে হারিয়েছেন। তিনি আজও  জানতে পারেননি জুরাইন কবরস্থানের ২১৯টির মধ্যে তার স্বামীর কবর কোনটি।

বিলকিছ আখতার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘গরীবের জীবন ও শ্রম দুটোই সস্তা। আমরা আজও  ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি।’

জুরাইনে নিহতদের কবরে পরিবার ছাড়াও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এসময় শ্রমিক নেতারা বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনাটি দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। চার বছর অতিবাহিত হলেও নিহত শ্রমিকদের অনেকের পরিবারকে এখনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। এসময় অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান শ্রমিক নেতারা ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা।

এছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন ২৪ এপ্রিলকে ‘গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।

জুরাইন কবরস্থানে রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসংগঠনটি আরও দাবি করেছে, কর্মক্ষেত্রে কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হলে, তার আজীবনের আয়ের সমান ৪৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া রানা প্লাজার  ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান পোশাক শ্রমিকরা। দুর্ঘটনায় আহত  শ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ নিহতদের যে সব পরিবার এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি তাদেরকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।

রানা প্লাজার জমিতে একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি করা হয় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। এছাড়া নিহতদের নাম পরিচয়সহ কবর সংরক্ষণের দাবি জানান তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এক হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। এছাড়া দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা  হয়। নিহতদের মধ্যে মধ্যে ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শনাক্ত করা যায়নি এমন ২৯১ জনের লাশ  ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিরে আসা জীবিত শ্রমিকদের মধ্যে এক হাজার ৫২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন ৭৮ জন।

/আরএআর/  এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 

রানা প্লাজা ধসের ৪ বছর: আজও শঙ্কা কাটেনি আহত শ্রমিকদের

রানা প্লাজার পিলার ভাঙতে শুরু করে দুর্ঘটনার আগের দিনই

রানা প্লাজা ধস: পঙ্গুত্বের কারণে ভেঙেছে অনেকের সংসারও

রানা প্লাজার তিন মামলা: বিচার বিলম্বিত যে কারণে

শত বাধা আর কষ্টেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তারা

ডায়েরি থেকে রেশমাকে উদ্ধারের অভিযান