সবুজবাগে মাদ্রাসাছাত্রকে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ, হুজুর পলাতক

সবুজবাগ

রাজধানীর সবুজবাগ থানার বাসাবো এলাকার একটি মাদ্রাসায় আট বছরের এক ছাত্রকে মুখে স্কচটেপ, হাত ও পা বেঁধে বলাৎকারের অভিযোগে ওই মাদ্রাসার একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর ওই শিক্ষক পালিয়েছে। ঘটনার শিকার ছাত্রটি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বলাৎকারের অভিযোগে বেলাল হোসেনকে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাকে শিগগিরই গ্রেফতার করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

শিশুটির ফুপু ময়না বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনমাস আগে আমার ভাইয়ের দুই ছেলেকে ওই এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দেওয়া হয়। আমরা গরীব, তাদের ভরণপোষণ ঠিকভাবে দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করি। গত ১৫ এপ্রিল রাতে ছোট ছেলেটির মুখে স্কচটেপ দিয়ে, হাত-পা বেঁধে মাদ্রাসার হুজুর বেলাল হোসেন তার রুমে নিয়ে যায়। এরপর তাকে বলাৎকার করে। এসময় মাদ্রাসার বাবুর্চি হৃদয় ঘটনাটি দেখে ফেলে। এরপর সে বিষয়টি মাদ্রাসা কমিটিকে জানালে বেলালকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এবং কমিটি ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। ’

ময়না বেগম বলেন, ‘আমরা তখনও এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। পরবর্তীতে ছেলেটির জ্বর উঠলে আমরা তাকে বাসায় নিয়ে আসি। তখন সে পায়খানা করতে চাইতো না। পায়খানা করার সময় রক্ত বের হতো। গত শুক্রবার তাকে  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন সেখানের চিকিৎসকরা আমাদের বলেছে, শিশুটিকে বলাৎকার করা হয়েছে। এরপর আমার ভাইয়ের বউ বুলবুলি ঘটনাটি থানায় গিয়ে জানায়। এবং সে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই হুজুর এ মাদ্রাসায় পাঁচ মাস ধরে চাকরি করতো। ঘটনার পর মাদ্রাসা কমিটির সদস্য হারুন ও লুৎফর রহমান অপরাধী বেলালকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। একারণে আজ (রবিবার) তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হুজুর এখনও গ্রেফতার হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাসাবোর ওহাব কলোনিতে ভাড়া থাকি। আমরা খুবই গরীব। আমার ভাইয়ের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বলাৎকারের শিকার ছেলেটি তৃতীয়। আমরা ধারণাও করতে পারিনি যে, মাদ্রাসায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এর বিচার চাই।’

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মাদ্রাসার দুই পরিচালককে গ্রেফতার করেছি। তারা হলেন, হারুন অর রশীদ ও লুৎফর রহমান। তারা আসামি বেলাল হোসেনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। তাই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামি বেলালকে গ্রেফতারে আমরা পৃথক কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি। তবে তাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

ঘটনার পর ওই মাদ্রাসাটি বন্ধ রয়েছে বলেও জানিয়েছে শিশুটির পরিবার।

/এআরআর/এপিএইচ/

আরও পড়ুন: তরুণীদের ধর্ষণের ভিডিও করেছিল ধর্ষকরা