হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার একবছর হওয়ার ঠিক ১০ দিন আগেও (২০ জুন মঙ্গলবার) গুলশান এলাকার সরেজমিন চিত্র ছিল অনেকটাই এরকম। এদিন বাসিন্দাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলি আর্টিজানে হামলার আতঙ্ক এখন না থাকলেও এর রেশ থেকে বের হতে পারেননি তারা কেউ। কি ব্যবসা, কি প্রতিষ্ঠান বা বাসাবাড়ি; হামলাস্থল ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান বেকারির রোডের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই ঝুলছে টু-লেট।
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডের পশ্চিম দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন আর এই রোডের শেষ বাড়িটিই হচ্ছে হলি আর্টিজান বেকারি ও লেকভিউ হসপিটাল। খালেদা জিয়ার বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে হলি আর্টিজানোত্তর পরিস্থিতি কেমন, জানতে চাইলে তারাও একে-অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে পরস্পরকে নিরুৎসাহিত করেন।
‘সব ড্রাইভারই দেখবেন খালি ঘামে’, হলি আর্টিজানপরবর্তী সময়কেই এই বাক্য দিয়েই শেষ করেন রিক্সাচালক কোরবান আলী। ৫৬৬ নম্বর নিবন্ধন দিয়ে গুলশানে হলুদ ড্রেস পরে রিক্সা চালান। তিনি বলেন, ‘দিনে জমা ৩৬০ টাকা। সারাদিনই প্যাডেল মারি। রিক্সা কম, মানুষ ডাকলেই যাইতে হয়। নিরাপত্তা মোটামুটি, বাইরের মানুষ কম আসে।’ এক নিঃশ্বাসে পুরোটা বলে প্রস্থান করেন তিনি। পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধ রিকশাচালক শফিকুল ইসলাম জানান, রিকশার জমা ৩০০। তবে জোর পাই না, হলি আর্টিজানের পর যাত্রী কমছে।’
কমান্ডো অভিযানে উদ্ধার হওয়া নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন থাকেন হলি আর্টিজানের পাশের একটি ফ্ল্যাটে। হামলার সময় রেস্টুরেন্টে আটকেপড়া মেয়েটি এখন ভালো আছে, বলে জানান তার গাড়িচালক মোশাররফ হোসেন। বাড়ির গেটের ভেতর থেকে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তিনি জানান, হলি আর্টিজানে হামলার রাতে সাড়ে আটটায় গাড়ি জমা দিয়ে বেরিয়ে গেছিলেন নিজের বাসার দিকে। ফেরেন দু’দিন পর। এখন দিনকাল কেমন? প্রশ্নের উত্তরের মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘হামলার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে ছাপটা আছে।’ মালিকের মেয়ের বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘উনি ক্লাস করেন নিয়মিত। তার অবস্থা স্বাভাবিক, তবে হামলার পর দু’তিন মাস স্বাভাবিক ছিলেন না। এখন ঠিক আছেন।’
ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে প্রহরায় থাকতে দেখা যায় দুই পুলিশ সদস্যকে। কথায়-কথায় জানালেন, তারা রিজার্ভ থেকে এসেছেন। সারাদিন হাসপাতালের সামনেই প্রহরায় থাকেন। তবে ৭৯ নম্বর রোডের কিনারেই ইরান দূতাবাস, ৮১ ও ৮২ নম্বর রোডের আশে-পাশে কয়েকটি দূতাবাসে পুলিশের উপস্থিতি না থাকলেও ৮৫ নম্বর রোডের মোড়ে র্যাব-পুলিশের যৌথ অবস্থান দেখা গেছে।
ডিসিসি মার্কেটের উত্তরদিকে খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করেন ইমরান হোসেন। তার দাবি, কেনাবেচা অর্ধেকে নেমেছে। তবুও ব্যবসা ও জায়গার কারণে এখনও এখানে রয়েছেন। ভাত-তরকারি, ছোলা-পেয়াঁজো, সবই বিক্রি করেন ইমরান হোসেন। ইফতারের আগে-আগে নিজের পণ্যের দিকে ইঙ্গিত করে ইমরান বলেন, ‘ইফতারের আগেও এমন বেচা-কেনা, এবার বুঝেন।’
গুলশানের হলি আর্টিজান পরবর্তী জীবনযাত্রা ও মানুষের ভেতরের পরিবর্তন সম্পর্কে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ তৈয়্যবুল বসর মাইজভান্ডারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান হামলার ব্যাপকতাই মানুষকে বেশি ভীত করেছে। এ কারণেই মানুষ ঘটনার আতঙ্ক কাটাতে পারলেও এর রেশ এখনও রয়ে গেছে। তবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সরকার যেভাবে কাজ করেছে, নিঃসন্দেহে তা প্রশংসনীয়।’
আরও পড়ুন-
- হলি আর্টিজান এখন
- অশ্রুসজল স্বজন আর স্বদেশ
- দুঃস্বপ্নের রাত, মমতার ইতিকথা
- অবিন্তা নেই, বেঁচে আছে তার স্বপ্ন
- তুমি কোথায়, গুলশানে জঙ্গি হামলা!
- দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন তারা
- ‘হয় আমি মরবো, না হয় ওদের মারবো’
- অপারেশনের শুরুতে উত্তেজনায় কাঁপছিলাম
- নিহত শাওনের মায়ের বিলাপে ভারি গুলশান
- হলি আর্টিজান কেন বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা?
- এসি রবিউলের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
- ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ থেকে ‘সান ডেভিল’
- শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন এডিসি আব্দুল আহাদ
- গুলি ও বোমার আঘাতেই মৃত্যু হয়েছিল হলি আর্টিজানের জঙ্গিদের
- গুলশান হামলায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠান নিয়ে দূতাবাসগুলোয় সতর্কতা
- হলি আর্টিজানের পলাতক জঙ্গিদের এক মাসের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে: মনিরুল
- হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা রাজশাহীতে, কৌশল নির্ধারণ গাইবান্ধায়, চূড়ান্ত অপারেশন প্ল্যান ঢাকায়
/এমও/