মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থাতেও উজ্জ্বল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা

অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে উপস্থিত অভিভাবকসহ অন্যরা (ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন)তাহমিনা রিয়া ও ইয়ামিন আফ্রিদি দু’জনেই প্রতিবন্ধী। তারা দু’জনেই সর্বশেষ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় একই রকম ভালো ফল করেছে সেরিব্রাল প্যালসি (এক ধরনের স্নায়বিক রোগ যার কারণে স্বাভাবিকভাবে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করার সক্ষমতা হারিয়ে যায়) শিক্ষার্থী ফিরোজ ও মাহবুবা। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থাতে এসব শিক্ষার্থীদের ভালো ফল প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে যাওয়ারই উদাহরণ।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) এসব প্রতিবন্ধী শিশুরা নিজেদের সাফল্যের গল্প নিয়ে হাজিয়ে হয়েছিল সিড (সোসাইটি ফর এডুকেশন অ্যান্ড ইনক্লুশন অব দ্য ডিজ্যাবল্ড), এইচএসবিসি ব্যাংক ও ঢাকা ট্রিবিউনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে। ‘চিলড্রেন ইন দ্য মেইনস্ট্রিম স্কুল: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিজ’ শীর্ষক এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ট্রিবিউন কার্যালয়ে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী শিশুদের কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় এবং এসব প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ কীভাবে ঘটানো যায়, তা নিয়ে সংলাপে আলোচনা করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও ফ্র্যাংকয়েস ডি ম্যারিকোর্ট, সিড-এর চেয়ারপারসন রঞ্জন কর্মকার, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সিড-এর নির্বাহী পরিচালক দিলারা সাত্তার মিতু, সিড-এর সহযোগী শিক্ষক পপি রানি সাহা এবং রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের অভিভাবকরা।
সংলাপে বক্তব্য রাখছেন সিড-এর নির্বাহী পরিচালক দিলারা সাত্তার মিতু (ছবি- ঢাকা ট্রিবিউন)সংলাপে বক্তারা প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির জন্য সামাজিক বাধা অপসারণ, অংশীদারদের ভূমিকা ও অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে জোর দেন। এছাড়া, প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সুবিধা তৈরিসহ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এইচএসবিসি ব্যাংকের সহযোগিতায় সিডের উদ্যোগে স্কুল রেডিনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে গত তিন বছরের ১০৩টি প্রতিবন্ধী শিশু প্রচলিত স্কুলগুলোতে পড়ালেখা করেছে। শুরুতে স্কুলগুলো এসব শিশুকে ভর্তি করাতে রাজি হয়নি। এখনও অনেক স্কুলই এসব শিশুকে ভর্তি করাতে অনিচ্ছুক। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব শিশুদের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকার কারণেই স্কুলগুলো এসব শিশুকে ভর্তি করতে চায় না। শুধু তাই নয়, অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতেও ইচ্ছুক নয়।
এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও ফ্র্যাংকয়েস ডি ম্যারিকোর্ট বলেন, এইচএসবিসি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই প্রতিবন্ধীদের নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রটিতে আমাদের সবার কথা বলা উচিত এবং যতটাসম্ভব কাজ করা উচিত।
অনুষ্ঠানে এইচএসবিসি ও সিড-এর অংশীদারিত্ব উদযাপনে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কেক কাটা হয় (ছবি- ঢাকা ট্রিবিউন)সিড-এর চেয়ারপারসন রঞ্জন কর্মকার বলেন, প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে সিড সমাজকে গড়ার জন্য কাজ করছে। অনেক কথা সহজেই বলা যায়। কিন্তু বাস্তবতা অত্যন্ত রূঢ়। মূলধারার স্কুলগুলোকে এসব শিক্ষার্থীর জন্য তৈরি করাটা কঠিন। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কাজ করলেও সত্যিকারের পরিবর্তন এখনও আসেনি। সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে জনসাধারণের মানসিকতার কোনও বদল এখনও আসেনি।
ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান বলেন, এই সংলাপে প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর কথা উঠে এসেছে। মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা প্রয়োজন। তবে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিজেদের সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদা পারভীন বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে আছি। আমাদের সহযোগিতা তাদের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করবে। মানবতার খাতিরে হলেও কি আমরা আমাদের প্রচলিত ভাবনাগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারি না? আমরা কি সবাই মিলে কাজ করে তাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আরও একটু সুযোগ তৈরি করে দিতে পারি না?
মোহাম্মদপুরের কনফিডেন্স মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কেবল এসব শিশুদের আচরণগত সমস্যাগুলোই দেখি। এর পেছনের কারণগুলো কিন্তু সামগ্রিকভাবে সমাজ তাদের সঙ্গে যে আচরণ করে, তারই বহিঃপ্রকাশ। আমাদের বিদ্যমান ধারণাগুলোতে পরিবর্তন আনা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।