‘বিচার’ না পেলে রওশন আরার মরদেহ নেবেন না স্বজনেরা

রওশন আরা (ফাইল ছবি)

‘দুই কিডনি হারানো’ রওশন আরার (৫৫) মরদেহ এখনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মর্গে রয়েছে। গতকাল বুধবার (৩১ অক্টোবর) রাত ১০টায় তিনি বিএসএমএমইউ-এর ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে তার মরদেহ হিমঘরে রয়েছে; বুঝে নিচ্ছেন না স্বজনেরা। এ ব্যাপারে রওশন আরার ছেলে শরীফ শিকদার বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা লাশ বুঝে নেবো না।’

গত ৫ সেপ্টেম্বর রওশন আরার বাম কিডনিতে অস্ত্রোপচার করেন বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকেরা। এরপর তার শরীরের অবস্থা খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখন সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে তার শরীরে কোনও কিডনিই নেই। এরপর থেকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল বুধবার মারা যান তিনি।

রওশন আরার ছেলে শরীফ শিকদার বলেন, ‘আমরা এখনও বিএসএমএমইউ-তে আছি এবং মায়ের লাশ আমরা এখনও বুঝে নিইনি। তার মৃত্যু নিয়ে আমাদের অভিযোগ আছে। আমরা কসাই ডাক্তারের শাস্তি চাই। আমার মায়ের এই অকাল মৃত্যুর বিচার চাই। এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছি। যখন মনমতো বিচার পাবো, তখন মায়ের মরদেহ কর্তৃপক্ষের কাছে চাইবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত চিকিৎসক দুলাল এখনও আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। আমি ও আমার খালা মায়ের বেডে বসে আছি। কিন্তু আমরা কোনও চিকিৎসককে দেখতে পাইনি।’

রওশন আরার আরেক ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার বলেন, ‘আমার মা আর নেই। আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। যেহেতু মাকে হারিয়েছি, এখন আমার একটাই চাওয়া– ওই চিকিৎসকের বিচার চাই। আমার মা কত কষ্ট করে মারা গেছেন, আপনারা জানেন। আমি বিচার চাই।’

এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ-এর ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা একটা দুর্ঘটনা। সে যে বাড়াবাড়ি করছে, এতে সে বিপদে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতদিন চুপচাপ ছিল। তার মায়ের অবস্থা খারাপ না হলে আগেই তার বিপদ হতো। ইতোমধ্যে কাল রাতে আমরা জিডি করেছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে অ্যাকশনে যাবো। তার ব্যাপারে সব ডকুমেন্টস আছে। সে ফেসবুকে লিখেছে যে, তাকে লিখে দিতে হবে, রোগীটা কিডনির কারণে মারা গেছে। সে শাহবাগ থানায় ফৌজদারি মামলা করবে। হাইকোর্টে মামলা করবে। সে যা ইচ্ছা করুক। কিন্তু সে কি তার মায়ের দাফন করবে না?’

তিনি আরও বলেন, ‘রোগী আইসিইউ-তে ছিল। রোগীর ব্যাপারে আইসিইউ থেকে সবকিছু বলবে। আইনের নিয়মে অথরিটি তার মরদেহ পুলিশকে দিয়ে দেবে। পুলিশকে হ্যান্ড-ওভার করা হবে। পুলিশ ঠিক করবে, কী হবে। আমরা চাচ্ছি, তার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সে তার মায়ের মরদেহ নিয়ে যাক এবং দাফন করুক। পরিচালক তাদের বারবার ডাকছে। পরিচালক ও প্রক্টর রাত দুইটা পর্যন্ত ছিল। হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সবসময় হ্যান্ড-ওভার করতে প্রস্তুত। তাদের বারবার বলা হচ্ছে, তবু তারা আসছে না।’

ডা. দুলাল বলেন, ‘তাকে লিখে দিতে হবে যে, তার মা কিডনির কারণে মারা গেছে। তার মায়ের যা যা হয়েছে, আমরা সবই লিখে দিচ্ছি। আল্লাহ যদি ওকে সুবুদ্ধি দিক, তার মায়ের লাশ সে নিয়ে যাক।’

এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউ-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মরদেহ আমরা থানায় ইনফর্ম করে হিমাগারে রেখে দিয়েছি। এখন থানা তার বিষয়টি দেখবে। উনার ঘটনায় তদন্ত করা হয়েছে। তিন-চার তারিখের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে যাবো। খুব শক্ত একটি দল দিয়ে এই তদন্ত করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: বাম কিডনি ফেলা হলো, ডানেরটা কোথায়!

রোগীর শরীর থেকে কিডনি গায়েবের ঘটনায় দুটি কমিটি

বোনের কিডনিতে বাঁচার স্বপ্ন রওশন আরার

দুই কিডনিবিহীন রোগীকে নিয়ে কী করবে বিএসএমএমইউ?

 

কোমায় রওশন আরা, আইনি লড়াইয়ে যাবেন সন্তান

কিডনি হারানো রওশন আরা মারা গেছেন