সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী নূরুল হক ভুট্টোর মামলা তদন্ত করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিম। পরে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় মানিলন্ডারিং মামলা। সেই মামলায় প্রথমবারের মতো কোটিপতি এই মাদক ব্যবসায়ীর সব সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ইতিহাসে প্রথম মাদকের মামলা থেকে মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে অনুসন্ধান করা হয়। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস পাওয়ার পর সেসব জব্দের আবেদন করা হয় আদালতে। মাদক ব্যবসা করে অর্থবিত্ত করেও যে তা ধরে রাখা যায় না, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে যাচ্ছে আদালতের এ নির্দেশের ফলে। এতে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একটি কড়া বার্তাও যাবে বলে মনে করছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা সম্পদের লোভে অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ আয় করেছে, তাদের জন্য এটি কড়া বার্তা। এভাবে আইনের আওতায় মাদক ব্যবসায়ীদের অর্থ-সম্পদ জব্দ করতে পারলে কেউ আর নতুন করে মাদক ব্যবসায় জড়াবে না। আমরা মনে করি, আমাদের চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে আদালত একটা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। এটি চলমান থাকলে সমাজে অপরাধ করে অর্থ আয়ের প্রবণতাও কমে যাবে।’
সম্প্রতি কক্সাবাজারের টেকনাফে একসঙ্গে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর আত্মসমপর্ণের পর তাদের বিলাসবহুল বাড়ি ও অর্থ-সম্পত্তির বিষয়ে কী হবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে। এই মামলার পর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মানিলন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান করে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পত্তি এভাবে জব্দ করতে পারলে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করা সহজ হবে। ফলে আত্মসমপর্ণ করেও কেউ অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থবিত্ত ভোগ করতে পারবে না।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেশব্যাপী একটি সিন্ডিকেটের ছয়টি উপ-সিন্ডিকেট ও অন্যান্য সহযোগীদের সন্ধান পাওয়া যায়। কক্সাবাজারের টেকনাফ, রাজধানীর সেনপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর পর্বতা, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাট ও গাজীপুরের পুবাইল থেকে একে একে এই সিন্ডিকেটের মোট ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ১৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মামলাটির তদন্তকালে তারা আসামিদের বিপুল অবৈধ সম্পদের খোঁজ পান। অথচ দশ বছর আগেও তারা এলাকায় রিকশা চালাতো। মাদক ব্যবসায়ীর এই সিন্ডিকেটের হোতা নূরুল হক ভুট্টো, তার বড় ভাই নূর মোহাম্মদ এবং বাবা এজাহার মিয়া মোট আটটি ব্যাংক, বিকাশের চারটি এজেন্ট ও ১৮২টি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকের অর্থ লেনদেন করতো। এই টাকায় তারা নির্মাণ করে দুটি বিলাসবহুল বাড়ি। কক্সবাজার শহর ও টেকনাফে নয়টি জায়গায় জমিও কিনেছিল তারা। মাদকের টাকা দিয়ে করতো বিলাসহুল জীবনযাপন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের এসব অর্থ জব্দ করতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ১৪ ধারায় আসামিদের সম্পত্তি ও বাড়ি ক্রোক করার জন্য কক্সাবাজারের বিশেষ জজ আদালতে একটি আবেদন করা হয়। গত ৫ মার্চ কক্সবাজারের বিশেষ জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ আবেদনটি আমলে নিয়ে সব সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেন।
এছাড়া টেকনাফ মৌজার আরএস ৯৬৯ নং খতিয়ানের এমআরআর ৭১২ নং, খতিয়ানে আরএস ৭৭৬৯ বিএস ৫৮৭ নং, খতিয়ানের সৃজিত বিএস ৪২৪৯ নং, খতিয়ানের বিএস ১৭৪০৪ নম্বরের নূরুল হক ভুট্টোর নিজের জমিতে নির্মিত পাঁচতলা ভিত্তির একতলা পাকা বিলাসবহুল বাড়ি এবং ৯০২ নং খতিয়ানের ১৭২৪৭ দাগের নয় শতক জমির ওপর নির্মিত দুইতলা পাকা বিলাসবহুল বাড়ি জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, ‘মাদক নির্মূলে এটি একটি ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি জব্দ করতে পারলে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পত্তি হারানোর একটি ভীতি তৈরি হবে। তাহলে সমাজ থেকে মাদক নির্মূলও অনেক সহজ হয়ে যাবে।’
ইয়াবা ব্যবসায় কোটিপতি এক পারিবারিক সিন্ডিকেট!