মশার ওষুধ আমদানিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য!





unnamedকৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সিন্ডিকেটের কারণে মশা মারার ওষুধ আমদানি ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এ কারণে মাত্র দুটি কোম্পানি ওষুধ আমদানি করছে। আর সিটি করপোরেশনও তাদের কাছ থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং ওষুধ আমদানির নিয়ন্ত্রণ করে। সংস্থাটি মশা নিধনে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ আমদানিতেও নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করে রেখেছে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, মশা মারার ওষুধ আমদানিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের ‘হাই পজিশন’ থেকে হয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর মশা নিধনের জন্য তারা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ওষুধ কিনে থাকেন। আর ওষুধের গুণগত মান নির্ধারণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ৫ অক্টোবর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশে জনস্বার্থে ব্যবহৃত বালাইনাশক আমদানিতে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয়। এর মধ্যে পণ্যের তথ্য-উপাত্ত, কারিগরি মূল্যায়ন, মিশ্রণের পরিমাণ এবং মূল্যায়ন, ভ্যাট সার্টিফিকেট, কোম্পানির মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের সচ্ছলতা সনদ, এনওসি, পণ্যের নমুনা মূল্যায়ন এবং বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিপিএ) নতুন নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানই মশা নিধনের কীটনাশক আমদানির যোগ্যতা হারায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের অভিযোগ, এই বিজ্ঞপ্তিকে বিধিমালা হিসেবে প্রচার করে সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি করে ফেলা হয় কীটনাশক আমদানি খাতকে। ফলে মাত্র তিন-চারটি কোম্পানির হাতে থেকে যায় আমদানির চাবিকাঠি। নতুন কোনও কোম্পানিকে ওষুধ আমদানির সুযোগ দেয় না এই সিন্ডিকেট। আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় এসব ওষুধ অকার্যকর প্রমাণিত হলেও তাদের কাছ থেকেই ওষুধ কিনতে হচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে জনস্বার্থে মশার কয়েল, লোশন, ভ্যাপোরাইজার বা অ্যারোসল ইত্যাদি আমদানির জন্য এলসি না খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং।
unnamed (1)এতে বলা হয়, এখন থেকে মশার ময়েল, লোশন, ভ্যাপোরাইজার ইত্যাদি ‘রেডি ফর ইউজ’ (ব্যবহার উপযোগী) অবস্থায় দেশে আমদানির সুযোগ থাকবে না। এসব পণ্য দেশে উৎপাদনের পর বাজারজাত করতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এমন নির্দেশনা দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ও ডিএনসিসি মশার ওষুধ সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উদ্ভিদ সংরক্ষণ অধিদফতরের এমন কাণ্ডের কারণে যেসব রেডি ফর ইউজ কয়েল, লোশন, ভ্যাপোরাইজার বা অ্যারোসল দেশে আসতো সেগুলো বন্ধ ছিল। আর এ কারণেই গত দুই বছর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ভয়াবহতা দেখা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ বাসাবাড়িতে এই প্রতিশেধকগুলো কিনে ব্যবহার করতে পারতো। বাসাবাড়িতে তো আর করপোরেশনের কর্মীরা যেতে পারে না। কিন্তু যখন উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে এটা বন্ধ করা হলো, তখন মানুষ ব্যক্তিগত প্রতিরোধ থেকে বঞ্চিত হলো।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক (বালাইনাশক প্রশাসন ও মান নিয়ন্ত্রণ) কৃষিবিদ এ জেড এম ছাব্বির ইবনে জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি সরকারের হাই পজিশন থেকে হয়েছে। তাই কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’
তবে ডিএনসিসি মেয়র মশার ওষুধ কেনার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি করেন। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যখন ওষুধ আমদানির বিষয়ে খবর নিতে যাই তখন দেখি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি বিজ্ঞপ্তি। এই বিজ্ঞপ্তিকে বিধি হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। এ কারণে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিরা আমদানির যোগ্যতা হারায়। ফলে দুটি কোম্পানি থেকে ওষুধ কিনতে আমরা বাধ্য হই। এই একটা সিন্ডিকেট সেটি ভেঙে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এখন আমরা (সিটি করপোরেশন) নিজেরাই ওষুধ আমদানি করতে পারবো।’