ম্যাগনেটিক কয়েনের জন্য কোটি টাকা দিয়ে প্রতারিত সাবেক এমপি, গ্রেফতার ৩




প্রতারক চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতারম্যাগনেটিক রাইস কয়েন বিক্রির কথা বলে জাতীয় পার্টির এক সাবেক সংসদ সদস্যের থেকে প্রায় কোটি টাকা (৯০ লাখ) হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় তিনি বনানী থানায় মামলা করেন। ৬ মাস মামলার তদন্ত শেষে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে বিশ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের একটি টিম।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, রবিবার বনানী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ম্যাগনেটিক রাইস কয়েন প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে বিশ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আসামিরা হলো বরগুনার বেতাগী উপজেলার জসিম উদ্দিন (৪২), বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুজন মিয়া (৩২) ও বরগুনার বেতাগী উপজেলার লাল মিয়া।

প্রতারক চক্রটি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি প্রকৌশলী এম তালহাকে বহু মূল্যবান ম্যাগনেটিক রাইস কয়েন দেওয়ার কথা বলে। আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ম্যাগনেটিক কয়েনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমেরিকার স্পেস রিসার্চ সেন্টার (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) নাসা'র কাছে কোটি টাকায় এই কয়েন বিক্রি করা যাবে বলেও জানায় প্রতারক চক্র। পরে কৌতূহলী হয়ে কথিত কয়েনটি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ওই নেতা।

পরে প্রতারক চক্রটি পরে ভিকটিম তালহাকে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে চক্রের আরেক সদস্য আমিনুল ইসলাম নিজেকে ইউরেনিয়াম এনার্জি লিমিটেডের সিনিয়র টেকনিশিয়ান হিসাবে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের অনেক নামী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তার মাধ্যমে ম্যাগনেটিক কয়েনের ব্যবসা করে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন লোকজনকে তারা এভাবে আকৃষ্ট করে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলে।

পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল আরও জানান, জাতীয় পার্টির ওই নেতা কয়েন কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখালে প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্য বিভিন্ন সময়ে তার বাসায় আসে। তারা নানা কথা বলে সাবেক এমপিকে ম্যাগনেটিক কয়েন ব্যাবসায় বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করে। কথিত কয়েনের সাজানো মালিকের কাছ থেকে কয়েনের ইউনিট ক্রয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে রিপোর্ট সংগ্রহ, প্যাকিং প্রক্রিয়া, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধির বিভিন্ন ব্যয়ভার বহন, বিক্রয় মধ্যস্থতাকারী এজেন্টের পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন কথা বলে ভিকটিমের থেকে ৯০ লাখ চার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে জাপার ওই নেতা বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এরপর গতবছরের সেপ্টেম্বরে ডিএমপির বনানী থানায় একটি মামলা করেন তিনি। মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে।

রবিবার সিআইডি জানতে পারে প্রতারক চক্র ভিকটিম তালহাকে আবারও রাইস কয়েনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। পরে অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেনের তত্ত্বাবধানে সিনিয়র এএসপি আবু সাইদের নেতৃত্বে একটি দল প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে বনানী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।

এ সময় চক্রটির হেফাজত থেকে আত্মসাৎ করা ২০ লাখ পঁচিশ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। মামলাটি সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে।