শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র

যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক শিশুদের ওপর নির্যাতন এবং নির্যাতনের কারণে তিন জনের মৃত্যু ও অনেকের আহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে বিশিষ্টজনেরা। বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক শিশুদের ওপর নির্যাতন এবং নির্যাতনের কারণে তিন জনের মৃত্যু ও অনেকের আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ এবং বিচলিত। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ওই কেন্দ্রটিসহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর নির্যাতন, তাদের রহস্যজনক মৃত্যু, নিখোঁজ প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদমাধ্যমে কেবল 'আত্মহত্যা' বা 'রহস্যজনক মৃত্যু' আর কোনও কোনও ক্ষেত্রে 'যৌন হয়রানি'র খবরই ছাপা হয়। কিন্তু নিয়মিত ও ধারাবাহিক নির্যাতনের সব খবর আমাদের অগোচরে থেকে যায়। যশোরের ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনও বিছিন্ন ঘটনা নয়; বরং শৃঙ্খলার অজুহাতে চালিয়ে যাওয়া ধারাবাহিক সহিংসতার সর্বশেষ প্রতিফলন মাত্র।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে পূর্বাপর বিষয়টি তদন্তের জন্য অবিলম্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি। এই তদন্ত কমিটির সদস্য নির্বাচন ও কার্যপরিধি নির্ধারণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটসের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

প্রস্তাবিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত কমিটি একটা নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করে শিশু উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের মতো অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের, বিশেষ করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র টঙ্গী, কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র কাশিমপুরের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করতে পারবে।

আরও বলা হয়, যথা দ্রুত সম্ভব সংশোধিত শিশু আইন অনুযায়ী দেশের সব প্রশাসনিক স্তরে শিশুকল্যাণ বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করা হোক, যেখানে সব শিশু নির্ভয়ে তাদের অভিযোগের কথা জানাতে পারবে।

শিশুদের জন্য নাগরিক সমাজের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. তোফায়েল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইতিহাসবিদ ও লেখক আফসান চৌধুরী, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মী লায়লা খন্দকার, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, লেখক ও গবেষক দিপু মাহমুদ, উন্নয়ন পেশাজীবী, থিয়েটার কর্মী ও মানবাধিকার কর্মী আসিফ মুনীর, ইন্টার-অ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুদ দাহার খান, সিডিএ’র নির্বাহী পরিচালক শাহ্-ই-মবিন জিন্নাহ, উন্নয়ন কর্মী ও গবেষক নবলেশ্বর ত্রিপুরা, উন্নয়ন কর্মী ও গবেষক পুলক রাহা, গবেষক ও অর্থনীতিবিদ নাজমী সাবিনা, দুর্যোগ ফোরামের সদস্য সচিব গওহার নঈম ওয়ারা এবং কবি ফারুক ওয়াসিফ।