যেসব রোগে আক্রান্ত সম্রাট, শামীম ও রফিকুল আমিন

বাম থেকে সম্রাট, শামীম ও রফিকুল আমিনক্যাসিনোকাণ্ড ও মানি লন্ডারিংসহ একাধিক অভিযোগের মামলায় দীর্ঘদিন থেকে কারাবন্দি আছেন ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম), যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ডেসটিনি-২০০০-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন। কারাবন্দি থাকলেও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা চিকিৎসাধীন আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ)। বন্দি অবস্থায় মাসের পর মাস চিকিৎসার নামে তাদের হাসপাতালে থাকার বিষয়ে আছে আলোচনা ও সমালোচনা। নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কারা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও। যে কারণে এসব বন্দির রোগ নির্ধারণে গঠন করা হচ্ছে মেডিক্যাল বোর্ড। দুই-একদিনের মধ্যেই এই বোর্ড গঠন হয়ে যাবে বলে জানান বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন।

হাসপাতাল ও কারা সূত্র জানায়, আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া ঠিকাদার জি কে শামীম চিকিৎসাধীন আছেন বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেলে। অস্ত্র, অর্থপাচার ও মাদক আইনে একাধিক মামলা আছে তার বিরুদ্ধে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানান, তার একটি হাত ভাঙা। সেই হাতে লাগানো আছে মেডিক্যাল ডিভাইস। এছাড়া তার রয়েছে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা। তিনি ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের বাসা থেকে গ্রেফতার হন। এ বছরের (২০২০) ৫ এপ্রিল থেকে বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

ক্যাসিনোকাণ্ডের আরেক অন্যতম আসামি হচ্ছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ক্যাসিনো মামলায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সেখান থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধ্যমে বিএসএমএমইউ’তে ভর্তি করা হয়। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন বিএসএমএমইউ’র সিসিইউ ওয়ার্ডে। তিনি হার্টে গুরুতর ইনফেকশনের কারণে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে জানান চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের (২০১৯) ২৪ নভেম্বর থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর গ্রেফতার হন ডেসটিনি-২০০০-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন। এরপর কখনও কারাগারে আবার কখনও বন্দি অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন অর্থপাচার মামলার এই আসামি। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। তখন থেকে তিনি এই হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিডনির দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ছাড়াও তার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে জানা যায়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারাগারের ভেতরের হাসপাতাল হোক আর বাইরের হাসপাতাল হোক, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অসুস্থ কারাবন্দিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। আবার হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠাতে হলেও চিকিৎসকের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না। তবে প্রতি ১৫ দিন পর পর কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে এসব বন্দিকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে পরামর্শ চায়। তখন চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বন্দিকে সুস্থ মনে করলে কারাগারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।’

দীর্ঘদিন ধরে জি কে শামীম, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও রফিকুল আমিনের চিকিৎসাধীন থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিনের কাছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমার কাজ হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিশেষজ্ঞরা যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দ্বিতীয়ত, আমার জানামতে এসব বন্দির স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার কারণেই উনাদের হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এখানে কাউকে ফেভার বা পক্ষপাত করার মতো কারণ অন্তত আমাদের কাছে নাই। তাছাড়া আমি উনাদের ভালোভাবে চিনিও না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে এবং আমাকে এ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে- সেজন্য আমি আমার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি, এ ব্যাপারে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করার জন্য। কোনও একক ডাক্তার নয়, তাদের বিষয়ে একাধিক ডাক্তার নিয়ে গঠিত বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। উনাদের শারীরিক অবস্থা কী এবং কী চিকিৎসা প্রয়োজন। শিগগির এই বোর্ড গঠন করা হয়ে যাবে। বোর্ড গঠনের বিষয়ে দুই-একদিনের মধ্যেই চিঠি দেওয়া হবে সংশ্লিষ্টদের।’

জি কে শামীম, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও রফিকুল আমিন কী ধরনের রোগে আক্রান্ত জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র এই পরিচালক ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, ‘যতটুকু জানি সম্রাটের কার্ডিয়াক সমস্যা রয়েছে। রফিকুল আমিনের ডায়াবেটিসসহ আরও কিছু সমস্যা আছে। আর জি কে শামীমের হাতের হাঁড় ভাঙা। তার হাতের ভেতরে ডিভাইস লাগানো আছে। তারপরও আপনাদের এসব প্রশ্নের কারণে আমি একাধিক চিকিৎসক নিয়ে একটি বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে আমি আপনাদের বিস্তারিত জানাতে পারবো।’

কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ছাড়াও স্যার সলিমুল্লাহ, জাতীয় হৃদরোগ, সোহরাওয়ার্দী ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আলোচিত তিন বন্দিসহ ১৮ জন বন্দি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।