ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের পুত্র মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের ব্যবহৃত সেই ‘ল্যান্ড রোভার’ গাড়িটির কোনও কাগজপত্রই হালনাগাদ নেই। গাড়িটি বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন পায় ২০০৪ সালে। ২০০৫ সালের ৩০ অক্টোবর গাড়িটির ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়। আর ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। কিন্তু আর কখনোই ফিটনেস সনদসহ গাড়ির কোনও কাগজপত্র হালনাগাদ করা হয়নি। বিআরটিএ-এর নিয়ম অনুসারে, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশনও বাতিল হয়ে গেছে।
জানা গেছে, গাড়িটির ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭১ টাকার। ১৫ বছর ধরে গাড়ির কাগজপত্রের হালনাগাদ নেই। সেই হিসেবে জরিমানাসহ এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। অথচ সংসদ সদস্য স্টিকার লাগিয়ে গাড়িটি নিয়ে সড়কে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছে ইরফান সেলিম। বিআরটিএ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর কলাবাগানে ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৫৭৩৬ নম্বরের এই গাড়িটি থেকে বের হয়েই নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে মারধর করেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিম ও তার সঙ্গীরা। সোমবার (২৬ অক্টোবর) পুরান ঢাকার চকবাজারের নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাস ও বিদেশি মদ রাখার দায়ে ছয় মাস করে তাকে মোট এক বছরের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিআরটিএ-এর তথ্য অনুসারে- ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স, নবায়ন ফি ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭১ টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়নি গাড়িটির। এর মধ্যে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বাবদ ৫৫৫ টাকা, অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স বাবদ ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা, নবায়ন ফি বাবদ ৬ হাজার ২৬২ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ এক হাজার ৮৮৮ টাকা রয়েছে। আর দীর্ঘ এই সময়ের জরিমানাসহ যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা।
গাড়িটির আমদানিকারক অটোটেক লিমিটেড। গাড়ির সেসিস নাম্বার-৩০৫৮৩৮। ইঞ্জিন নম্বর ১৭-এইচ০৯৭২৩সি। উৎপাদনের সন ১৯৮৭। ইঞ্জিনক্ষমতা ২৪৯৫ সিসি। পরবর্তীতে বাড়িটি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের নামে মালিকানা হস্তান্তর করা হয়। গাড়িটি ২০০৪ সালের ৩০ অক্টোবর বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন পায়। ২০০৫ সালের ৩০ অক্টোবর গাড়িটির ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়। ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। নিয়ম অনুসারে, প্রতিবছর নির্ধারিত ফি দিয়ে ফিটনেস সনদ হালনাগাদ করতে হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোনও সনদই হালনাগাদ করেনি গাড়ির মালিক। আর ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ না থাকলে নির্ধারিত হারে জরিমানার বিধান রয়েছে।
বিআরটিএ-এর একজন কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী, এই যানবাহনগুলো প্রতি বছর সড়ক মহাসড়কে চলাচলের উপযুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা দিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। আর ২০১৯ সালের ২৩ মে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকের ১০ বছরের অধিক সময় ধরে নবায়ন করা হয়নি সেসব মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বিআরটিএ কর্তৃক বাতিল করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাফিক সার্জন জানান, সড়কে সাধারণত সংসদ সদস্য স্টিকার লাগানো গাড়ি দেখেলে তারা সম্মন প্রদর্শন করেন। বড় ধরণের কোনও ঝামালা না হলে তারা সেসব গাড়ি চেক করেন না। তাদের বিশ্বাস, যারা আইন প্রণয়ণ করেন তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। সেই হিসেবে তো নিজ দায়িত্বেই সংসদ সদস্যের গাড়ির কাগজপত্র নবায়ন করে নেওয়া উচিত।
নতুন সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ নিয়ে গাড়ি চালানোর দায়ে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। একই সাজা প্রযোজ্য হবে ট্যাক্স টোকেন সনদের ক্ষেত্রেও।
গাড়িটির বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘গাড়িটির ফাইল দেখে বিস্তারিত বলতে হবে।’
আরও খবর:
ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ অন্যান্য আইনে মামলা হবে: র্যাব ডিজি
‘ইফরানের মামলার তদন্তে প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই’
‘সাম্রাজ্য চালাতে’ হাজী সেলিমের বাসায় কন্ট্রোল রুম
হাজী সেলিমের ছেলের টর্চার সেলে মিললো হাড়, দড়ি ও হ্যান্ডকাফ
হাজী সেলিমের ছেলেসহ দুজনকে কারাদণ্ড
আড়াই ঘণ্টার অভিযানে হাজী সেলিমের ছেলে র্যাব হেফাজতে
নৌবাহিনীর কর্মকর্তা হত্যাচেষ্টা মামলায় আরও একজন গ্রেফতার