নাটকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ভিত্তিহীন মন্তব্য: মানবাধিকার কমিশনের ক্ষোভ

টেলিভিশন নাটকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ভিত্তিহীন মন্তব্য করায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভায়। বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অটিজম বিষয়ক থিমেটিক কমিটির ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা বলেন, ‘ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালায় চ্যানেল আইতে প্রচারিত “ঘটনা সত্য” নামে একটি নাটক নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রতিবন্ধিতা জীববৈচিত্র্যের একটি অংশ। অথচ ওই নাটকের শেষ অংশে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম নেওয়াকে মা-বাবার পাপের ফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে অবৈজ্ঞানিক, ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত। এ মন্তব্যের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের অভিভাবকদের অনুভূতিতে তীব্র আঘাত দেওয়া হয়েছে।’

বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এ বিষয়ে অনেকেই তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ইতোপূর্বেও গণমাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধিতাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবাদের পর দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। এবারও নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ক্ষমা ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। এ ধরনের নেতিবাচক ও বিরূপ বক্তব্য প্রচার ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’-এর ৩৭ (৪) ধারা অনুসারে একটি দণ্ডযোগ্য অপরাধ।

সভায় এ বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে– ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সব কনটেন্টে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হবে; কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদানের সুপারিশ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হবে; সব গণস্থাপনা ও সেবাসমূহে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সার্বজনীন ন্যায়সংগত অধিকার আইনের খসড়া প্রস্তুত করে সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে পাঠাতে হবে।

আলোচনা সভায় অংশ নেন– কমিটির সম্মানিত সদস্য ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার উল্লাহ, ডিজঅ্যাবিলিটি কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের সদস্য মনসুর আহমেদ চৌধুরী, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান, সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, ডিজঅ্যাবিলিটি রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসোসিয়েশনের (ডিআরআরএ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন, উইম্যান উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন্নাহার মিষ্টি।

/জেইউ/এমএএ/