‘শঙ্কা নিয়েই’ কাল থেকে সড়কে নামছেন পরিবহন শ্রমিকরা

বিধিনিষেধের সময়সীমা শেষ করে আগামীকাল বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে চালু হচ্ছে গণপরিবহন। দীর্ঘদিন পর কর্ম ফিরে পেয়ে পরিবহন শ্রমিকরা একদিকে যেমন উচ্ছ্বসিত, অন্যদিকে শঙ্কাও রয়েছে তাদের। করোনা মহামারিতে উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেই ‘জীবন ও জীবিকার তাগিদে’ কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে সরকার। পরিবহন শ্রমিকদের আশঙ্কা, করোনার প্রকোপ না কমলে আবারও মুখোমুখি হতে পারে লকডাউনের, বন্ধ হতে পারে তাদের কর্ম।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলো বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় ধুলো ময়লা জমে গেছে। সেগুলো পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন সংশ্লিষ্টরা। যে যার কাউন্টারগুলো পরিষ্কার করছেন জীবাণুনাশক দিয়ে। অনেকে আবার কাউন্টারগুলো নতুনভাবে রঙ করছেন। বেশ কয়েকদিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় গাড়িগুলোর সচলতা পরীক্ষার জন্য অনেকেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। গাড়ির ব্যাটারিসহ চাকা ঠিকঠাক আছে কিনা সে বিষয়টিও তারা চেক করছেন। উৎসবমুখর পরিবেশ সেখানে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আজ মঙ্গলবার রাত থেকেই অনেকে বিভিন্ন গন্তব্যের গাড়িগুলো ছাড়বেন। কাল সকাল থেকে শুরু হবে পুরোদমে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল করবে। গত কয়েক দফার লকডাউনকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। 

গাবতলী বাস টার্মিনালে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সাড়ছেন দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার শোয়েব হাসান। তিনি জানালেন, গাড়ি চলাচল শুরু হবে, তবে আবার যদি বন্ধ হয়ে যায় সেই আতঙ্ক তো রয়েছে। তারপরও সরকার আমাদের দিকে তাকিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পূর্ণ আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে গণপরিবহন। সেক্ষেত্রে নিতে হবে মহামারির আগে নির্ধারিত ভাড়া। এটা আসলে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের জন্য ভালো হল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিট অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করতে পারবো আমরা। সে কারণে পাবলিকের আর বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে না। যেহেতু ফুল যাত্রী হবে, তাই আমাদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না। বাকিটা ভবিষ্যতে কী হয় তখনই বোঝা যাবে।

তবে এই সিদ্ধান্ত পরিবহন সংশ্লিষ্টদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে বলেই মনে করেন জামান পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার রাজ্জাক। তার মতে, অনেক সময় দেখা গেছে বাড়তি ভাড়ার জন্য অনেকে গন্তব্যে যেতে পারছেন না, আবার অনেকের সাথে ভাড়া নিয়ে গ্যাঞ্জাম লাগতো। এখন আর এ ধরনের কোনও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগের মতোই অবস্থায় আমরা ফিরে যাবো।

করোনা পরিস্থিতিতে আবার কখন পরিবহন বন্ধ হয়ে যায় সেই শঙ্কাও রয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। পরিবহন শ্রমিক আমিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরাতো করোনার চেয়ে বেশি ভয় পাই লকডাউনকে। এই লকডাউনের কারণে আমাদের বিশেষ করে পরিবহন খাতে যারা পরিবহন শ্রমিক রয়েছে তাদের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখন গাড়ি চলাচল হলে আমাদের সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারবো।

পরিষ্কার হচ্ছে কাউন্টারগুলো

আরেক পরিবহন শ্রমিক মজনু জানালেন, গত কয়েক দিনের লকডাউনে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়েছে। তার কথায়, এটা কী ধরনের কষ্ট ভাই বলে বোঝানো যাবে না। আমরা চাই সরকার যেহেতু গণপরিবহন চলাচল করার অনুমতি দিয়েছে আর যেন বন্ধ না হয়।

প্রায় একইরকম কথা বললেন কমফোর্ট লাইনের কাউন্টার ম্যানেজার সুমন। তার দাবি, সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাতেই আমরা খুশি। গাড়ির সিট অনুযায়ী যাত্রী নিতে পারলেই হবে। আমরা যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করবো।