ঢাকা মেডিক্যালে বাড়ছে রোগীর চাপ

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এরমধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়া রোগীও রয়েছেন অনেকে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গিয়ে জানা গেছে, রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রোগী ১৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫ জন ঢাকার। বাকি ১৪ জনই ঢাকার বাইরের। এদের মধ্যে কয়েকজন করোনা পজিটিভ, আর বাকিরা করোনার উপসর্গসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছেন।

হাসপাতালের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে করোনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গত ২১ ও ২২ জানুয়ারি, দুই দিনে পাঁচ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে তিন জনেরই ভ্যাকসিন নেওয়া ছিল। জানুয়ারির শুরুতে করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি ছিল ১৬২ জন। এরমধ্যে ৩২ জনেরই ছিল করোনা পজিটিভ। ২২ জানুয়ারিতে ভর্তির সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ জনে, তার মধ্যে পজিটিভ ছিল ১৭৪ জন। এরমধ্যে প্রথম ডোজ নেওয়া ছিল ১২ জন আর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া ছিল ৩৪ জনের।

ঢামেকে করোনার ইউনিট চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৫৯১ জন।

অ্যাম্বুলেন্সে-রোগী

চট্টগ্রামের ষোলশহর থেকে আব্দুস সালাম হাওলাদারকে (৫৬) ঢামেকের করোনা ইউনিটে নিয়ে এসেছেন তার ছেলে মো. হামিদ। তিনি জানান, তার বাবার দুটি ভ্যাকসিনই দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, পরে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। পরে করোনা পরীক্ষাতেও পজিটিভ আসে। সেখান থেকে রেফার করা হলে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

একই দিনে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কক্সবাজার টেকনাফের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম (৩৫)। তার ফুপাতো ভাই শাহনেওয়াজ জানান, মাজহারুল দুবাই প্রবাসী ছিলেন, সেখান থেকে তিনি একসময় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে কিছু দিন কাজ করার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে দেশে ফিরে আসেন। এখানে প্রাইভেট একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তার বোনমেরুর ক্যানসার ধরা পড়ে। এই চিকিৎসা চলাকালেই তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়।

প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে তাকে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ভর্তি করতে না পারায় রবিবার ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শাহনেওয়াজ বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এখানে তার করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর ক্যানসার বিভাগে পাঠানো হবে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও টিকা না নেওয়ার কারণেই বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে প্রতিনিয়ত যেভাবে রোগী আসছে, সেটা বিবেচনা করে কোভিড রোগীদের জন্য কয়েকটি ওয়ার্ড ফাঁকা করা হয়েছে। এখন সেই ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। 

অ্যাম্বুলেন্সে রোগী

তিনি বলেন, বর্তমানে কোভিড ইউনিটে (২৩ জানুয়ারি) ৩৫০ রোগী ভর্তি রয়েছেন। করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতাল ৩শ’ শয্যা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে মেডিসিন বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের কার্যক্রম কমিয়ে দিয়ে হাসপাতালের দুটি ভবন, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কিছু অংশ, আইসিইউ, এইচডিইউসহ প্রায় ৯শ’ শয্যা করোনা ডেডিকেটেড করা হয়। যেখানে সর্বোচ্চ ভর্তি ছিল প্রায় ৯৫০ জন রোগী। একটা সময় দৈনিক ১শ’রও বেশি করোনা রোগী ভর্তি হতো। একদিনে সর্বোচ্চ ভর্তি হয়েছিল ১১৯ জন। সেখান থেকে রোগী কমতে কমতে ডেল্টা ঢেউয়ের পর করোনা রোগীর সংখ্যা দেড়শ’র নিচে চলে আসে।

আগের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, রোগীর চাপ বেড়ে গেলে পর্যায়ক্রমে আবারও সব শয্যা খালি করে ফেলা হবে। বর্তমানে আমাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থাও বেড়েছে, আমাদের সব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমরা চাই না পরিস্থিতি আগের পর্যায়ে যাক। এ জন্য সবার সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, টিকা নিতে হবে। টিকা নিলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যাবে বলে জানান ঢামেক পরিচালক।