২০১৯ সালে ধানমন্ডিতে জোড়া খুন

পুরনো গৃহকর্মীর ষড়যন্ত্রে খুন করে নতুন গৃহকর্মী

২০১৯ সালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আলোচিত জোড়া খুনের নেপথ্যে ছিল পুরনো গৃহকর্মীর ষড়যন্ত্র। তার ইন্ধনেই নতুন যোগ দেওয়া গৃহকর্মী খুন করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করতেই তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে পিবিআই সদর দফতরে পুলিশের এই বিশেষ বাহিনীর ব্রিফিং শেষে বিশেষ পুলিশ সুপার (এসআইএন্ডও) আহসান হাবীব পলাশ সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

২০১৯ সালের ১ নভেম্বরে ধানমন্ডির ১৫ নং রোডের একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও তার বাসার গৃহকর্মী দিতি খুন হন।

 

ধানমন্ডিতে জোড়া খুন: গৃহকর্মী যেকোনও সময় গ্রেফতার

 

এই ঘটনায় আফরোজা বেগমের মেয়ে আইনজীবী দিলরুবা সুলতানা রুবা বাদি হয়ে ধানমন্ডি থানায় ওই বছরের ৩ নভেম্বর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করে। এরপর পিবিআইর হাতে যায় মামলার ভার।

দুই বছর তদন্ত শেষে পিবিআই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছে।

পিবিআই কর্মকর্তা আহসান হাবীব পলাশ বলেন, ‘মো. বাচ্চু মিয়া (৩৪) দশ বছর ধরে আফরোজা বেগমের বাসায় কাজ করেছে। এক পর্যায়ে আফরোজা বেগমের অর্থ সম্পদের প্রতি তার লোভ জন্মায়। চুরি করার কৌশল খুঁজতে থাকে সে।’

তিনি আরও জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে নাহিদা (২২) নামে এক তরুণী বাসায় কাজ খুঁজতে ধানমন্ডিতে আসে। বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে কাজের সুবাদে কথাবার্তা ও ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়। আসামি বাচ্চু মিয়া পরে নাহিদাকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার লুটের পরিকল্পনা করে।

নাহিদাকে নতুন কাজের লোক সাজিয়ে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর আফরোজা বেগমের বাসায় নিয়ে যায় বাচ্চু মিয়া।

আহসান হাবীব বলেন, ‘নাহিদা প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করে ও টুকটাক কিছু কাজ করে। বিকাল ৪টার দিকে বাচ্চু মিয়া বাসায় এসে আফরোজা বেগমের কাছে আলমারির চাবি চায়। এসময় নাহিদা ছুরি নিয়ে আফরোজা বেগমের শয়নকক্ষে যায়। চাবি দিতে অস্বীকার করলে বাচ্চু মিয়া ও নাহিদা ছুরি দিয়ে আফরোজা বেগমের গলা ও বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এরপর ভিকটিমের বালিশের নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে ১টি স্বর্ণের চেইন, ২টি স্বর্ণের চুড়ি, ১টি মোবাইল সেট নেয় বাচ্চু মিয়া। বাসায় থাকা অপর গৃহকর্মী দিতি পাশের কক্ষ থেকে ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও নাহিদা ছুরি দিয়ে একাধিক আঘাত করে পালিয়ে যায়। ভিকটিম দুজনই ঘটনাস্থলে মারা যান।’

আফরোজা বেগমের বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর নাহিদা তার আগারগাঁওয়ের বাসার মাটি খুঁড়ে স্বর্ণালঙ্কার রেখে দেয়। মোবাইল ফোনটিও বিক্রি করে দেয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছে সে।

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের তদন্ত শেষ। নাহিদা ও বাচ্চুকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত। শিগগিরই আদালতে জমা দেওয়া হবে।’

 

গৃহকর্মী নিয়োগে পিবিআই’র সুপারিশ

১। নিয়োগের আগে নাম ঠিকানা যাচাই করতে হবে।

২। জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিতে হবে।

৩। অপরিচিত কাউকে হঠাৎ বাসায় কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

৪। দীর্ঘ দিনের গৃহকর্মীকে অতিরিক্ত বিশ্বাস না করে সতর্ক নজর রাখতে হবে।

৫। মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে যাচাই করতে হবে।

৬। মোবাইলে ছবি তুলে রাখতে হবে।