সিআইডি পরিচয়ে বাসা থেকে চিকিৎসককে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

রাজধানীর রামপুরা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচয়ে সদ্য এমবিবিএস পাস করা শাকির বিন ওয়ালী নামে এক চিকিৎসককে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তার বাবা। তার বাবাও একজন চিকিৎসক। তিনি রামপুরা থানা ও সিআইডিতে গেলে কেউ তার সন্ধান দিতে পারেননি। পরবর্তীতে এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে রামপুরা থানা পুলিশ কোনও অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিতে রাজি হননি।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শাকির বিন ওয়ালীর বাবা ডা. এ, কে, এম ওয়ালী উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে এই অভিযোগ করেন।

এ, কে, এম ওয়ালী উল্লাহ একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১১ সেপ্টেম্বর বিকাল তিনটার দিকে সিআইডি পরিচয়ে সিভিল পোশাকে চারজন ব্যক্তি আমার বাসায় প্রবেশ করেন। আমি তখন পেশাগত কাজে বাসায় ছিলাম না। শুধু আমার স্ত্রী, কন্যা ও পুত্র আমার বাসায় ছিল। তারা আমার ২য় সন্তান সদ্য এমবিবিএস পাস করা ডা. শাকির বিন ওয়ালীকে বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নামে নিয়ে যায়। তাদের নাম, পরিচয় ও ফোন নাম্বার জানতে চাইলে শুধু বলে আমরা সিআইডির লোক। আমি খবর পেয়ে রামপুরা থানায় সরাসরি যোগাযোগ করি। তারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেন। তখন আমি জিডি করতে চাইলে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মাওলা আমার কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো উনার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নোট করেন এবং ঘটনার খোঁজ-খবর নিয়ে আমাকে পরবর্তীতে জানাবেন বলেন।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘একই দিন অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে আরও ৪/৫ জনের একটি দল আমার বাসায় আসেন, নিজেদেরকে সিআইডি’র লোক পরিচয় দেন এবং আমার ছেলে শাকির বিন ওয়ালীর রুম তল্লাশি করেন এবং একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। তাদের নাম, পরিচয় ও মোবাইল ফোন জানতে চাইলে শুধু বলেন— আমরা সিআইডি’র লোক। শাকিরের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন— সে (শাকির) সিআইডি (মালিবাগ) এ আছে। তদন্তের স্বার্থে তারা ২য় বার এসেছেন।’

১২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি সিআইডির মালিবাগ অফিসে যান এবং সেখানে রিসিপশনে যোগাযোগ করেন। তবে তারা শাকির বিন ওয়ালীর ব্যাপারে কোনও তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১.৩০টার দিকে ছেলেকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে এ, কে, এম ওয়ালী উল্লাহ রামপুরা থানায় যান এবং রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মাওলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছেলের বিষয়ে জিডি করতে চান। কিন্তু পুলিশ তাকে বলেন, ‘উনি নিশ্চিত যে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আপনার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছে, তাই জিডি নেওয়া সম্ভব নয়।’

শাকির বিন ওয়ালী কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০২০ সালে এমবিবিএস পাস করেন। বর্তমানে তিনি এফসিপিএস করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলেও জানান তিনি।

শাকির বিন ওয়ালী ছাত্রজীবনে রেটিনা কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ওই কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। তার বাবা এ,কে, এম ওয়ালী উল্লাহ ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিফ) সহসভাপতি। এই প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি ও ডানপন্থী ঘরানার চিকিৎসকদের।

জিডি না নেওয়ার বিষয়ে রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মাওলা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাসা থেকে নেওয়ার সময় সিআইডি পরিচয় দিয়েছে। আমরা তো তাদের বিরুদ্ধে জিডি নিতে পারি না। আমরা শাকিরের বাবাকে বলেছি আপনি খোঁজেন।’