নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে স্থবির সদরঘাট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

নৌযান শ্রমিকদের ডাকে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বেতনসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে আছে ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী নৌযানগুলোও। সকাল থেকে লঞ্চ ছেড়ে না যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘রাতে থেকে বিভিন্ন রুটের ৩৫টি লঞ্চ সদরঘাটের পন্টুনে ভিড়েছে। সকাল থেকে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল চাঁদপুর ও ইলিশায়, একটাও ছেড়ে যায়নি। শুধু সকালে একটি লঞ্চ ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।’

নৌযান শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নৌযান শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে; ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস দিতে হবে; বাল্কহেডের রাত্রীকালীন চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে; বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে; চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে; চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে; কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে; বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে।

সদরঘাট অপেক্ষমাণ যাত্রীরা

রোববার (২৭ নভেম্বর) সকালে সদরঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ফাঁকা পড়ে আছে পন্টুন। শ্যামবাজার ঘাটে জড়ো করে রাখা হয়েছে লঞ্চ। অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে টার্মিনাল এলাকা, নেই নৌশ্রমিকদের উপস্থিতি। কর্মবিরতির বিষয় না জানা থাকায় ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। সদরঘাট থেকেই অনেকে বিকল্প বাহন হিসেবে পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে করে রওনা দিচ্ছে গন্তব্যে। চাঁদপুরে মাইক্রোবাসে খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা ও পিকআপ ভ্যানে ৪০০ টাকা।

রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে আসা ইসমত আরা বলেন, ‌‘চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। বাসে আসতে ২ ঘণ্টা লেগেছে। এসে দেখি লঞ্চ নেই। ঢাকায় এসেছি ডাক্তার দেখাতে। বাসে চড়তে পারি না। সঙ্গে দুই বছর বয়সী ছেলে রয়েছে, বাসে অস্থির হয়ে যায়। এখন কিছু করার নেই। যাত্রাবাড়ী গিয়ে বাস পাই কি না দেখতে হবে।’

সদরঘাট শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে পড়ে ফেরত যাচ্ছেন যাত্রীরা

মুগদা এলাকা থেকে আসা মেহেদী হাসান বলেন, ‘চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। এখন বাসে যাবো ভাবছি। আগেভাগে জানা থাকলে ভোগান্তি হতো না।’

নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিতে চলমান কর্মবিরতিতে সারা দেশের নৌযান শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন, শতভাগ শ্রমিক অংশ নিয়েছেন। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া হলে আমরা কর্মসূচি তুলে নেবো।’

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘লঞ্চ না চললে আমাদেরও লস, তাদেরও লস। এখনও বসাবসি হয়নি। আমরা চাচ্ছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।’