ফারদিনের মৃত্যুর কারণ জানিয়ে এ সপ্তাহেই প্রতিবেদন জমা দেবে ডিবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশের (২৪)  মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে দেখিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে আদলতে প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে এখনও আত্মহত্যার বিষয়টি মানতে নারাজ ফারদিনের পরিবার। তারা বলছেন, ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারে না। তদন্তকারী সংস্থার প্রতিবেদন আদালতে জমা হলে নারাজি দেবেন তারা।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এই ঘটনার মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বুয়েটছাত্র ফারদিন মারা যাওয়া বিষয়ে তিন-চার দিনের মধ্যেই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সেই বিষয়টি এখন পরিষ্কার। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিসি রাজিব আল মাসুদ বলেন, এই মামলায় তদন্ত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে।সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর ফারদিনের মৃত্যু প্রধান কারণ তদন্তে বেরিয়ে আসে। জানা যায়, টাকার জন্য হতাশা ও মানসিক চাপ থেকেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে ফারদিন। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

গত ৪ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে ফারদিন নূর ডেমরার কোনাপাড়া এলাকার বাসা থেকে বুয়েটের উদ্দেশে বের হন। পরদিন ৫ নভেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাসায় ফেরার কথা ছিল তার। পরবর্তীতে তারা মা–বাবা জানতে পারেন, ফারদিন পরীক্ষায় অংশ নেননি এবং তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই দিন বিকালে তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর দুই দিন পরে ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। পরে লাশটি নিখোঁজ বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের বলে শনাক্ত করে তার পরিবার।

ঘটনার দুই দিন পর ৯ নভেম্বর রাতে নূর উদ্দিন বাদী হয়ে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে প্রধান আসামি করে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে ডিএমপি রামপুরা থানায় তার বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানার করা হত্যা মামলার মূল তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ। আর ঘটনায় ছায়াতদন্ত করে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এই মামলায় ফারদিনের বন্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে প্রধান আসামি করেন নুর উদ্দিন। বুশরাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে রিমান্ডেও নেওয়া হয় তাকে। কিন্তু কোন তথ্য না পাওয়ায় এবং আত্মহত্যার বিষয়টি তদন্তে বেরিয়ে আসায় গত ৮ জানুয়ারি আমাতুল্লাহ বুশরার অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন দায়রা জজ আদালত।

তদন্তকারী সংস্থা ডিবি ও র‌্যাব বিভিন্ন সময় ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তবে গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিজ দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ফারদিন টাকার জন্য হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে। মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হবে বলেও জানান তিনি। ওই দিন র‌্যাবও ফারদিন আত্মহত্যা করেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। আর বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুতে তার বান্ধবী আমাতুল বুশরার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানায় দুই সংস্থাই।

কী বলছেন ফারদিনের বাবা

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় ফারদিন নুর পরশের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ফারদিন কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মধ্যে আত্মহত্যার কোনও রিজন (কারণ) নাই। তদন্তকারী সংস্থা আত্মহত্যা বলে প্রতিবেদন দিলে আমি নারাজি দেবো। তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। প্রসাশনই খুনিদের আড়াল করতে চেষ্টা করছে। তারা এখন আত্মহত্যার বিষয়টি সাজিয়েছে। এর আগে দুই তদন্ত সংস্থা ভিন্ন অবস্থান থেকে তথ্য দিলেও, তারা এখন সহঅবস্থানে চলে এসেছে।

ন্যায়বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, সময় একটা বড় ফ্যাক্টর। আর সেই সময় হলে নিশ্চয়ই ছেলে হারানোর ন্যায়বিচার পাবো বলে আশা করি। তাৎক্ষণিকভাবে অনেক ঘটনাই জানা যায় না। সময় হলে বেরিয়ে আসে। ফারদিনের ক্ষেত্রেও সেটা হবে বলে মনে করি। ফারদিন কোনও রাজনীতি করতো না। কিন্তু সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো।

ফারদিন নুর পরশের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা (ফাইল ছবি)

কাজী নুর উদ্দিন রানা বলেন, ফারদিন মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে বুশসার একটা দায় আছে। সে ফারদিনের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা ঘুরলো। আর পরীক্ষার আগের দিন রাতে একজনের সঙ্গে এতো সময় ঘোরা, এটা স্বাভাবিক ছিল না। তারা ‘ইয়াম চা ডিস্ট্রিবিউশন’নামের একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খায়। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। রাত ১০টার দিকে আয়াতুল্লাহ্ বুশরার সঙ্গে রিকশায় করে রামপুরা টিভি স্টেশন এলাকায় আসে ফারদিন। বুশরা তার জবানবন্দিতে জানায় হোটেলে নাস্তা করার সময় ফারদিন সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল।

ফারদিনের বাবা বলেন, বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে ফারদিন রামপুরা ব্রিজি, জনসন রোড, বাবু বাজার ব্রিজ, কেরানীগঞ্জ ব্রিজ, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঘুরেছে প্রায় চার ঘণ্টা। এসব এলাকার কোনও সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা গেলো না? রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় কোনও একটি সিসিটিভি ফুটেজ তাকে শনাক্ত করা গেলে ফারদিনের মারা যাওয়ার কারণ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।

তিনি দাবি করেন, এই চার ঘণ্টা ফারদিনের স্বাধীন মুভমেন্ট ছিল বলে জানায় ডিবি। স্বাধীন মুভমেন্টের কোনও কারণ নেই। আত্মহত্যার জন্য কেউ এতো ঘুবরে না। কিন্তু কাউকে খুন করতে হলে নিরাপদ স্থান খুঁজতে হয়। আর নিরাপদে কেউ তাকে খুন করার জন্য ফারদিনকে নিয়ে এতো জায়গায় ঘুরেছে।

আরও পড়ুন- 

ফারদিনের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন তার বাবা

বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত কারণ এখনও পায়নি ডিবি

বুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার: বান্ধবীসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ

শীতলক্ষ্যায় ভাসছিল নিখোঁজ বুয়েট ছাত্রের লাশ

‘পরিকল্পিতভাবে ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ফারদিনকে’

টাকার জন্য হতাশায় আত্মহত্যা করেছে ফারদিন, দাবি মহানগর ডিবি প্রধানের