ট্র্যাপে পড়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ, এমন দাবি করেছেন তার বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা। তিনি বলেন, এটি এমন কোনও ঘটনা নয় যে হুটহাট করে মারামারির কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যারা পরিকল্পিত কোনও ঘটনা ঘটায় তারা তো অবশ্যই আটঘাট বেঁধেই পরিকল্পনা করে থাকে। তার ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলেও কাজী নুর উদ্দিন দাবি করেন।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তদন্ত কর্মকর্তারা এই রহস্য উন্মোচন এবং সঠিক ঘটনা উন্মোচনে কাজ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কাজী নুর উদ্দিন বলেন, আমি শুরু থেকেই বলে এসেছিলাম এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনা পরিকল্পিত এখনও সেটাই বলছি। আমার ছেলে কোনও ধরনের মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যদি নারায়ণগঞ্জের চানপাড়ায় তার লোকেশন শনাক্ত হয় তাহলে ট্র্যাপে ফেলে কেউ তাকে সেখানে নিয়ে গেছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে পরবর্তীতে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
ফারদিনের বাবা বলেন, আমার ছেলে বাসা থেকে বের হয়ে যে ডিরেকশনে যাওয়ার কথা ছিল, তার মায়ের কাছে যেভাবে বলে যায় কোথায় যাবে, ওই দিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগেও সে তার মাকে সেভাবেই বলে গিয়েছিল। যদি তার লোকেশন নারায়ণগঞ্জ হয়, তাহলে আমি বলবো সে কখনও নিজে থেকে সেখানে যেতে পারে না। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে কোনোভাবে ট্র্যাপ করে রাখা হয়েছিল। তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল এবং ফোন তার সঙ্গে রাখা হয়েছিল।
পত্রপত্রিকায় অনেক বিষয়ে উঠে এসেছে, তা দেখে অনেক মন খারাপ হচ্ছে বলে জানান ফারদিনের বাবা। বিষয়টি তদন্তাধীন উল্লেখ করে নুর উদ্দিন রানা বলেন, আমরা আমাদের আস্থা রাখতে চাই গণমাধ্যমের ওপর। আস্থা রাখতে চাই তদন্ত কর্মকর্তাদের ওপর। আমার সন্তান কারও শত্রু ছিল না। তার নিজের কারণে কোনও শত্রু তৈরি হয়নি, আমার পরিবারের বা আমার ব্যক্তিগত কারণেও তার কোনও শত্রু তৈরি হয়নি। তবে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে তাকে সরিয়ে দিতে হবে, তার এগিয়ে যাওয়ার যদি সহ্য করতে না পারে, তাহলে সেটা ভিন্ন বিষয়। এসব বিষয়ে তদন্তে উঠে আসবে।
তিনি দাবি করেন, গত ৪ নভেম্বর ডেমরার বাসা থেকে দুপুরের পর বের হওয়ার সময় তার মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল সে ক্যাম্পাসে আসবে, গ্রুপ স্টাডি করবে, পরদিন পরীক্ষা দিয়ে বাসায় গিয়ে দুপুরে মায়ের হাতে ভাত খাবে। আমার সন্তান তার মায়ের কথা ছাড়া কোনও পা ফেলে না।
নুর উদ্দিন আরও দাবি করেন, ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর তার যে মোবাইলে রোমিং বা অবস্থান পরিবর্তনের ঘটনার বিষয়টি উঠে এসেছে তদন্তে, সে স্বেচ্ছায় যায়নি এ বিষয়টিও উঠে আসবে। সে ট্র্যাপে পড়ে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে, কোনও অজানা কারণে বাধ্য হয়ে থাকতে পারে, এ শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। আমি মনে করি সে যা করেছে বাধ্য হয়ে করেছে। সে বিষয়টি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা অনেক দক্ষ।
বুশরাকে কেন আসামি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন বলেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন বুশরার সঙ্গে ছিল। তার সঙ্গেই লাস্ট কথা হয়েছে। লাস্ট কোম্পানি ছিল তার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক, তার পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন-
ফারদিনের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন তার বাবা
বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত কারণ এখনও পায়নি ডিবি
বুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার: বান্ধবীসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ