কৃষিজমি রক্ষায় ৭ দফা দাবি নিয়ে মানববন্ধন

তিন ফসলি জমিতে নেওয়া মাদারগঞ্জ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ও নদী সিকস্তি অঞ্চলে ডিএস, সিএস, এসএ রেকর্ড এবং চিটার ভলিউম দেখে প্রজাস্বত্ব বহাল ও খাজনা-খারিজ চালুসহ ৭ দফা দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি। রবিবার (১৯ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলেন, দেশের নদী সিকস্তি অঞ্চলে বসবাসকারি তিন কোটি মানুষ জানমালের ঝুঁকি নিয়ে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অনাবাদযোগ্য উঁচু-নিচু জমি আবাদযোগ্য করে দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সব গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই স্বাধীনতার পর এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের ভাগ্যের বদল হবে। কিন্তু স্বাধীন দেশে সমস্যার সমাধান হয়নি, বরং ঔপনিবেশিক শাসন আমলের আদলে নতুন আইন ও আইনের সংশোধন করে বাপ-দাদার পৈতৃক জমির অধিকার হরণ করা হয়েছে। আইনের মারপ্যাঁচে আজ চরের মানুষ তার পৈতৃক জমির প্রজাস্বত্ব হারিয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জে প্রভাবশালী স্বার্থন্বেষী মহল কৃষকদের জমি জবরদখল করে তিন ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে।

তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, তিন ফসলি জমিতে কোনও প্রকল্প নয় এবং কোনও জমি পতিত রাখা যাবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অগ্রাহ্য করছে প্রভাবশালী স্বার্থন্বেষী মহল। তারা কৃষকদের বঞ্চিত করে যেখানে বিদ্যুতের সুব্যবস্থা আছে সেখানেই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করতে চায়। আর কৃষকরা যাতে ক্ষতিপূরণ না পায় সে জন্যে প্রভাব খাটিয়ে বগুড়ার ধরাবর্ষা মৌজার একাংশ জামালপুরে সঙ্গে যুক্ত করে কাইজার চর নামে ভুয়া মৌজা তৈরি করে খাস খতিয়ানে এনে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমির প্রজাস্বত্ব ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে মামলা করায় স্বার্থন্বেষী মহলটি ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।

বক্তারা বলেন, নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা ছাড়াই সারা দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নদী খননের নামে চলছে বালু ব্যবসার মহোৎসব। বালু মাফিয়াচক্র ড্রেজিংয়ের নামে কৃষকদের কায়েমি জমি কেটে নিচ্ছে। নদীর পাড় সংরক্ষণও ঢালু সঠিক মাপমতো না করায় নদী খননের পরে জমিজমা ভেঙে আবার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী ভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেই।

বক্তারা সংগ্রাম কমিটির ৭ দফা দাবি আদায়ে চলমান লড়াই জোরদার করতে চরাঞ্চলে গ্রামে গ্রামে কমিটি করে সদস্যদের আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

তাদের দাবিগুলো হলো– মাদারগঞ্জে তিন ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে অন্যত্র স্থানান্তর করা; বগুড়ার ধরাবর্ষা মৌজার একাংশে ভুয়া জেএল, ভুয়া মৌজা তৈরি করে খাস খতিয়ানে এনে কৃষকদের জমি হরণের চেষ্টা বন্ধ করা; মাদারগঞ্জে কৃষি জমি রক্ষায় আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া; বিনা ক্ষতিপূরণে কৃষকের জমিতে কোনও প্রকল্প না নেওয়া, তিন ফসলি জমিতে প্রকল্প না নেওয়া; অবিলম্বে ভূমি আইন-২০২২ সংসদে পাস, চরাঞ্চলে ডিএস, সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড ও চিটার ভলিউম দেখে প্রজাস্বত্ব বহাল ও খাজনা-খারিজ চালু করা; নদী ভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; চরাঞ্চল, বীর অঞ্চল ও শহরে ভিন্ন ভিন্ন জমির সিলিংয়ের বন্দোবস্ত রেখে সারা দেশে গ্রাম-শহরে ব্যক্তিগত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির সিলিং পুনর্নির্ধারণসহ উদ্বৃত্ত সম্পত্তি ভূমিহীন-আশ্রয়হীন মানুষের মাঝে বন্টন করতে হবে।

৭৫০ একর কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি ও চরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্ববায়ক নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কৃষক নেতা আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ও সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও কৃষক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক কৃষক নেতা জাহিদ হোসেন খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জামালপুরের কৃষক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আক্কাস, বিশিষ্ট কবি ও সুরকার আলতাফ হোসেন মাস্টার প্রমুখ।