মালিবাগে বাস-ট্রেন দুর্ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য!

রাজধানীর মালিবাগে রেলগেট পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় সোহাগ পরিবহনের একটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘটনায় রেলের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অভিযোগ, ব্যারিকেড সরিয়ে বাসটি রেললাইন পার করার চেষ্টা করে বাসের সহকারী। তবে বাস কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, ব্যারিকেড দেওয়ার আগেই বাসটি ঢুকে পড়ে রেল লাইনে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে রেল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি আহ্বায়ক রেল সহকারি পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘আমরা তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো। তবে প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে আসছে, এটা চালকেরই দোষ। গেটম্যান ফারুক ব্যারিকেড ফেলার পরে সোহাগ পরিবহনের সহকারী সুজন মিয়া সেটি সরিয়ে বাস পার করতে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আরও গাড়িও দাঁড়িয়েছিল। যদি ব্যারিকেড না দিতো গেটম্যান, তাহলে আরও গাড়ি যেতো। এতে করে শুধু সোহাগ পরিবহনের এই বাসটিই দুর্ঘটনার শিকার হতো না। আরও গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তো। কিন্তু তা হয়নি। বাসের হেলপাররা দুইপাশের ব্যারিয়ার সরানোর চেষ্ট করাতেই এ দুর্ঘটনা।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

আমিনুল হক বলেন, গেটম্যান ব্যারিকেড ফেলে পাশে কোথায় যেন গেছিলেন। এ সময় বাসের সহকারি ব্যারিকেড সরিয়ে বাস পার করার চেষ্টা করেন। এতেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ট্রেন গেট পার হতে চার থেকে পাঁচ মিনিট সময় নেয়। তাহলে গেটম্যান ফারুক কীভাবে ব্যারিকেড ফেলে পাশে গেলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন কিছুই বলতে চাননি রেলের এই কর্মকর্তা। পরে বলেন, আরও তদন্ত করে দেখা হবে। 

গেটম্যান ফারুকের দায়িত্ব অবহেলার কোনও বিষয় এসেছে কিনা জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় গেটম্যান ফারুকের কোনও দায়িত্ব অবহেলা হয়নি।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকালের ঘটনার পর থেকে মালিবাগ রেলগেটে আর ডিউটিতে আসেননি গেটম্যান ফারুক। এ বিষয়ে রেলের এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে, তিনিও বিষয়টি নিয়ে বলতে চাননি। শুধু বলেন, তার সঙ্গে কথা হয়েছে, নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

সোহাগ পরিবহনের মৌচাক কাউন্টারের ইনচার্জ রবিউল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সোহাগ পরিবহনের কোনও বাস আজ পর্যন্ত ব্যারিকেড সরিয়ে রেলগেট পার হয়নি। নিজেদের সমস্যা থাকতে তারা এখন এসব কথা বলছে। কোম্পানির এত টাকার একটি বাস এভাবেই ট্রেনের রাস্তা পার করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলবে। এটা কেউ চাইবে না।

বুধবার ২২ মার্চের ঘটনার পর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট বদরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে মালিবাগ রেল গেটের গেটম্যান ফারুক ব্যারিকেড না ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন

সেখানকার ফল বিক্রেতা সিদ্দিক রহমান ও হাসেম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গেটম্যান ফারুক ব্যারিকেড ফেলার আগেই বাসটি রেল লাইনের মধ্যে চলে যায়। ট্রেন আসার সংকেত বাজার কিছু সময় পর ফারুক এসে ব্যারিকেড ফেলে। এতে করে এই দুর্ঘটনা। 

রেলগেটের মুখে দীর্ঘ দিন ফলের ব্যবসা করা লোকজন বলছেন, বাসের লোকজন ব্যারিকেড উঠাইয়া বাস পার করেনি। গেটে ব্যারিকেড না থাকায় বাসটি পার হতে যায়। এছাড়া এখানে দীর্ঘদিন থেকে আছি। কিন্তু কোন দিন ব্যারিকেড সরিয়ে বাস পার করার দৃশ্য দেখিনি।

এ প্রসঙ্গে হাসেম মিয়া বলেন, এই রেলগেটে আমি এমন দুর্ঘটনা আরও দুটি দেখেছি। এর মধ্যে দিবানিশ একটি বাস ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ছিটকে দূরে চলে যায়। কিন্তু বুধবারের ঘটনা কমের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু ভয় কাটেনি এখনও। এখানে বসে আতঙ্কে আছি কখন জানি আবার কি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, গেটম্যান ফারুক ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করত না। সে রেল গেটের আশপাশে ভ্রাম্যমান বসা দোকানগুলো থেকে টাকা তুলতেন। অনেক সময় রুমের মধ্যে বসে থাকেন। ট্রেন একেবারেই কাছাকাছি চলে আসলে তড়িঘড়ি করে ব্যারিকেড নামিয়ে দেন।