ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বক্তব্য যথার্থ

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বক্তব্য যথার্থ এবং নির্যাতনের মাত্রা আরও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। শুক্রবার (২৩ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনে নেতারা এসব কথা বলেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি দে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বরাবর ছয় কংগ্রেসম্যান একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অস্বচ্ছ নির্বাচনপ্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ন করা এবং ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের প্রসঙ্গটিকে আংশিক আকারে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি যদিও প্রকৃত বিচারে এর চেয়েও অনেক বেশি, তবু কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে এটি আংশিক আকারে ফুটে উঠেছে।

বিজন কান্তি বলেন, আমরা লক্ষ করেছি, কতিপয় সংখ্যালঘু নামধারী ব্যক্তি ওই চিঠিতে উল্লেখিত সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নিপীড়নের বিষয়টিকে অস্বীকার ও মিথ্যা বলে বিবৃতি দিয়েছেন এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করছেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হলেও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। উল্টো এসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোকে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লোটার কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদন মতে, ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫১টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি।

এসব ঘটনার কোনোটিরই বিচার হয়নি জানিয়ে বিজন কান্তি দে বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু যাদের ওপরেই হামলা কিংবা মামলা হোক, প্রতিটি সহিংস ঘটনার সঙ্গেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জড়িত। মূলত তারা সব সময় ধর্মকে নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ ও অস্থিরতা জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন করে যাচ্ছে। সুতরাং সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বক্তব্য যথার্থ এবং যারা তা মিথ্যা প্রচার করতে চাইছে, তাদের প্রতি আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন ফ্রন্টের উপদেষ্টা নিতাই রায় চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অপর্ণা রায় দাস, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, রনজিত রায়, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মন্ডল প্রমুখ।