দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাত্র কয়েক মাসের জন্য নতুন একজন আইনপ্রণেতা পেতে যাচ্ছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাষানটেক এলাকার বাসিন্দারা। জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের ভোটগ্রহণ আজ সোমবার (১৭ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই এলাকার ভোটাররা তাদের নতুন প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ভোট দিতে পারবেন বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
সকাল থেকে এই নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন অংশে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এরফলে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতিও বাড়বে বলে মনে করছেন বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টরা।
সকাল ৯টা পর্যন্ত ভাষানটেক ও মাটিকাটাসহ-এর আশপাশের ভোটকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া অন্য কোনও প্রার্থীর কর্মীর উপস্থিতি তেমন একটা নেই। এছাড়া ভোটকেন্দ্রগুলোতে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতিও একেবারেই কম। তবে কেন্দ্রগুলোতে সকল প্রার্থীরই এজেন্ট উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে আওয়ামী লীগ সমর্থক ভোটাররা ভোট দিতে এসেছেন। শুরুর দিকে কিছুটা ভিড় ছিল। পরে কিছুটা কমেছে।
ভাষানটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন আবদুল মোহাম্মদ সাহেব আলী। তিনি বলেন, ‘সকালে বৃষ্টি হওয়ায় বাসা থেকে বের হই নাই। এখন আসলাম, কোনও লাইনে দাঁড়াতে হয় নাই। গেলাম আর ভোট দিয়ে আসলাম।’
দেওয়ানপাড়ার লিটল চাইল্ড কেয়ার স্কুলে ভোট দিতে আসা শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই এখানে আছি। সকালে ভোটারদের ভিড় ছিল। পরে বৃষ্টির কারণে লোক কমে গেছে। লোক আরও বাড়বে।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যালটে। সিসিটিভির মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচন উপলক্ষে সব রকম প্রস্তুতি শেষ করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই দাবি করে এ সাংবিধানিক সংস্থার প্রত্যাশা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের।
এদিকে নির্বাচনি এলাকায় সোমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার মধ্য রাত থেকে সেখানে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রবিবার দিনগত মধ্যরাত থেকে নিষিদ্ধ রয়েছে বাস, ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, প্রাইভেটকার, ইজিবাইক চলাচল।
ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের বিষয়ে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই দাবি করে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, আশা করি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার নির্বাচনি সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারবো।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার মেয়াদে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলো ইভিএমে করলেও ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন হবে ব্যালটে। তবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ভোটকক্ষগুলোতে সিসি ক্যামেরা থাকবে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনের ভোটার তিন লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০। ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৬০৫টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন আট জন। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মোহম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. আকবর হোসেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. আশরাফুল আলম (হিরো আলম) এবং মো. তারিকুল ইসলাম।
প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারণায় বেশি তৎপর ছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মোহম্মদ আলী আরাফাত, একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম ও জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের সিকদার আনিসুর রহমান।