জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি গুমের শিকার স্বজনদের

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানানো হয়েছে। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর অভ্যুত্থানচেষ্টার অভিযোগ এনে সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের ফাঁসি দিয়ে লাশ গুমের দায়ে তার মরণোত্তর বিচার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

বুধবার (৩০ আগস্ট) সকাল ১১টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা’ ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। 

এতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এক মিনিটেই জীবন-মৃত্যুর ফায়সালা দিতেন। ১৯৭৮ সালের ওয়াশিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, জিয়াউর রহমান অভিযুক্তদের কোর্টে পাঠানোর আগেই ৩০-৪০ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন। ৭৭ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের স্বজনেরা গুম হয়ে আছেন। আমরা জানি না তারা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছেন। আকবর নামে একজনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরি। আকবর মারা যাওয়ার ২০ বছর পর তার ছেলে-মেয়ে এ খবর জানতে পারে। তখন তারা তাদের মাকে বিধবার শাড়ি দেয়। ১৯৭৭ সালে যা ঘটেছিল তা ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অধ্যায়, গুমের অধ্যায়। জিয়াউর রহমানের টর্চার সেলে একসঙ্গে ৫০-৬০ জনকে চোখ বেঁধে পেটানো হতো। যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করবে বলে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল জিয়া তাদের কীভাবে হত্যা করতে পারলো?’

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘জিয়ার অন্যায়ভাবে দেওয়া ফাঁসিতে সেদিন যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের স্বজনদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে এখানে এসেছি। তাদের কান্না এখনও থামেনি। এই কান্না থামারও নয়। তাদের যে ন্যায্য দাবিগুলো আছে, সে দাবিগুলো নিয়ে কথা বলতে এসেছি। জিয়ার ওপর পাকিস্তানের নির্দেশ ছিল মুক্তিযুদ্ধ বানচাল করতে হবে, কিন্তু সে পারেনি। তখন পাকিস্তান থেকে নির্দেশ এসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের হত্যা করতে হবে। তাই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করেছে জিয়া। পরে জেলে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জিয়ার শুরু করা হত্যা এখনও চলমান। জানামতে ১৯৭৭  সালে জিয়া এক হাজার ৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে। প্রতি এক মিনিটে একেকটা রায় দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের। আজিমপুর কবরস্থানের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, সেদিন একের পর এক মৃতদেহ আসছিল। কিন্তু আমরা জানি না, তা কোথা থেকে আসছে।’

মানববন্ধনে ১৯৭৭ সালে গুমের শিকার শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার সন্তান নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘সেদিন তারা আমার বাবাকে হত্যা করে। আমি জানি, বাবা ছাড়া বড় হওয়া কত কষ্টের। বাবা বলে না ডাকতে পারা কত কষ্টের। আজকে এখানে আমার ভাই-বোনরা দাঁড়িয়েছেন তাদের স্বজনদের খোঁজে। তারা এখনও জানেন না তাদের বাবার কবর কোথায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা কেন সেদিন আমাদের কাছে আসেননি? আপনারা সেদিন কোথায় ছিলেন? জিয়াউর রহমান এ দেশে গুমের রাজনীতি শুরু করে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান করেছে গ্রেনেড হামলা আর অগ্নি সন্ত্রাসের রাজনীতি। সবাইকে বলবো, আপনারা এক হয়ে জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি তুলুন। এই খুন-গুমের সুষ্ঠু বিচার হোক।’

মানববন্ধনে আরও ছিলেন– গণহত্যা বিষয়ক গবেষক আনোয়ার কবির, ১৯৭৭ সালে চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট নূরুল হক, মুনিরুল ইসলাম প্রমুখ।