কুয়েতের ভিসা জালিয়াতি করে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ

ছদ্মনামে ফেসবুক পেজ খুলে কুয়েতের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো মো. শরিফুল ইসলাম, আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা ওরফে হৃদি মাহাজাবিন ও আহিয়ান শিশির ওরফে কামরুজ্জামান শিশির। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ৪০টি পাসপোর্ট, ৯টি জাল ভিসা, জাল বিএমইটি কার্ডের ফটোকপিসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা এলাকায় তাদের গ্রেফতার করে ডিবি ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহানগর গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
  
তিনি বলেন, একটি প্রতারক চক্র বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য গুলশান-১-এ আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নেয়। ওই অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে পেজ খোলে। সেখানে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেউ বিদেশ যেতে ইচ্ছুক হলে তারা ওই আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে একটা চুক্তিতে করে। পরে প্রতারক চক্র আরবিতে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির কুয়েতের সঠিক ভিসা কপি সংগ্রহ করে। ভিসা নম্বর ঠিক রেখে ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে কুয়েতের জাল ভিসা তৈরি করে। জাল ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন দিনের ট্রেনিং শেষ করে সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।

পরে ওই জাল ভিসা, পাসপোর্ট ও ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে একজন বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি জনশক্তি ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে অবস্থিত ফিংগার প্রিন্ট অফিসে ফিংগার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য যান। ওই অফিস কুয়েতের সরকারি ওয়েবসাইটে ভিসা নম্বর চেক করে অ্যাপ্লিকেশন স্টেটাস অ্যাপ্রুভড থাকায় তারা বিদেশ গমনেচ্ছুক ব্যক্তিদের ফিংগার প্রিন্ট গ্রহণ করে। পরে বায়োফিংগার সাকসেস মর্মে এক কপি যাত্রীদের দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার চক্রটি একটি সঠিক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যান কপিতে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিখে তা রঙিন কপি প্রিন্ট করে। সেটা দেখিয়ে বিএমইটি কার্ডও কমপ্লিট হয়েছে বলে জানায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের। এরপর বিমানের টিকিট দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চুক্তির পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।

অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, এভাবে চক্রটি অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার স্বীকার একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটি তদন্তে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকদের শনাক্ত করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত শরিফুল ইসলামের নামে বিভিন্ন থানায় ৪টি ও আবরার জাওয়ার তন্ময়ের নামে ১টি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে। আবরার জাওয়ার তন্ময় ও কামরুজ্জামান শিশির উভয়ই ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে হৃদি মাহাজাবিন থেকে আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা এবং শারমিন থেকে কামরুজ্জামান শিশিরের পরিচয় ধারণ করে। ডিবির নিবিঢ় তদন্তে তাদের প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার হয়। ডিএমপির গুলশান থানায় করা মামলায় গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও এজেন্সি সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করে টাকাপয়সা লেনদেন করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন মহানগর গোয়েন্দা প্রধান।