চলছে না দূরপাল্লার বাস, যাত্রীদের কাছে ট্রেনই ভরসা

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফার অবরোধ চলছে সারা দেশে। দ্বিতীয় দফায় ৫ ও ৬ নভেম্বর অবরোধ শেষে এক দিন বিরতি দিয়ে ফের ৮ নভেম্বর সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে দল দুটির। তাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগসহ নানা কারণে চলছে না দূরপাল্লার কোনও বাস।

এমন অবস্থায় অন্য কোনও পরিবহন না পেয়ে জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করা মানুষ ভিড় করছে ট্রেন স্টেশনগুলোয়। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে, ট্রেনের সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে আবার দুই বগির সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে হলেও গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং বিমানবন্দর স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় টিকিট কাটার লাইনে অতিরিক্ত ভিড়। স্টেশনের ভেতরে প্ল্যাটফর্মগুলোয়ও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

ট্রেনে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় দেখছেন না যাত্রীরা

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যের উদ্দেশে যাওয়ার অন্য কোনও পরিবহন না পেয়ে ট্রেনকেই ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা।

কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাত্রী আসাদুজ্জামান জয় বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, অবরোধের কারণে গত কয়েক দিনে বের হননি তিনি। আজ জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হচ্ছে। তাই ট্রেনে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই তার। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধ থাকলেও প্রয়োজন তো আর থেমে থাকে না।

সকালে কমলাপুর স্টেশনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আন্তনগর ট্রেনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি যাত্রী ছিল। ফিরতি ট্রেনগুলোও সময়মতো স্টেশনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া শিডিউল অনুযায়ী সব ট্রেনই ঢাকা ছেড়েছে।

শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে আজ যাত্রীদের ভিড় বেশি হয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর আসন সংখ্যার তুলনায় যাত্রীর পরিমাণও বেশি।

তিনি আরও জানান, অবরোধ বা হরতাল যা-ই হোক, শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। অবরোধের জন্য ট্রেন বন্ধ থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই। শুধু নির্দিষ্ট দিনে সাপ্তাহিক বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো বন্ধ থাকবে।

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের আরও বেশি ভিড় দেখা গেছে। এই স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত ছিল না। টিকিট না পাওয়ার কারণে অনেক যাত্রীকে হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে উঠতে দেখা গেছে। এখানে টিকিট দিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন টিকিট মাস্টাররাও।

বিমানবন্দর স্টেশনের টিকিট মাস্টার কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজ সকাল থেকেই যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড়। যতক্ষণ টিকিট দেওয়া সম্ভব হয়েছে দিয়েছি। নির্ধারিত টিকিট শেষ হওয়ার পর যাত্রীরা টিকিট ছাড়াই ট্রেনগুলোতে উঠে গেছে।

বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে

এদিকে অবরোধের মধ্যেও বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমলাপুরসহ রেলস্টেশনগুলোয় নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী রেলওয়ে পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি রেলওয়ে থানা পুলিশ (জিআরপি) দায়িত্ব পালন করছে। স্টেশনের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে টিকিট কাউন্টার হয়ে ট্রেনে গিয়ে ওঠা পর্যন্ত তিন জায়গায় আরএনবি এবং জিআরপি রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা বিভাগীয় কমান্ডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হরতাল বা অবরোধ যা-ই হোক, কোনও ধরনের সহিংসতা ছাড়াই যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন বলে আশা করছি। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা যেকোনও সময় যেকোনও সিদ্ধান্ত নেব।