বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি

‘শান্তিপূর্ণভাবে লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হলেও আন্দোলন মনে করা হয় না’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, দেশে যখন একটা রাজনৈতিক সংঘাত ও অনিশ্চয়তা থাকে, সমাজের নানা অংশে তার একটা বড় অভিঘাত দেখতে পাওয়া যায়। এই অভিঘাতের সঙ্গে যুক্ত থাকে আমাদের শিক্ষার্থীরা।

সাইফুল হক বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে করা আন্দোলনে যখন লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাকে আন্দোলন মনে করা হয় না। হরতাল-অবোরাধ-সহিংসতা না হলে সেটাকে আন্দোলন মনে করা হয় না। এখন আমরা একধরনের অসুস্থ মানসিকতায় আক্রান্ত হচ্ছি। সামগ্রিকভাবে তরুণ প্রজন্ম কিংবা শিক্ষার্থীরা, দেশ যে এককভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছে, এগুলো সবাইকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার। না হলে সামনে এগোতে পারবো না।

দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘শিক্ষার্থীদের ওপর রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রভাব' শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন তিনি। শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের নিয়মিত এই আয়োজন।

সাইফুল হক বলেন, একেবারে নার্সারি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লাখ লাখ শিক্ষার্থী আছে, তাদের কাছে এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হয়। শিক্ষার্থীরা যখন বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স শেষ করতে পারে না, নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা দেওয়া যায় না, তখন তার মধ্যে একধরনের হতাশা ও মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কাজ করে।

তিনি আরও বলেন, একবিংশ শতাব্দী থেকে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সংকটগুলো রাজপথের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নিষ্পন্ন কেন করতে হবে? কেন আমরা আলাপ-আলোচনা করে, কথাবার্তা বলে, একটা দায়িত্বশীল আচরণ করে সম্পন্ন করতে পারবো না? দ্বিতীয়ত, আমাদের সমাজ অসম্ভব রকমভাবে রাজনীতি-মনস্ক। রাজনীতির দিক দিয়ে খুব ভাইব্রেন্ট এবং চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অলিগলি, শহর, নগর, বন্দরে ‘রাজা-উজির’ মারার যে প্রবণতা, সেটা আমাদের মজ্জাগত। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষার অধিকার থেকে নাগরিক অধিকার বা দেশের জনগণের মুক্তির যে প্রশ্ন, তারাও সেটি বিবেচনায় রাখেন।

যখন ভ্যাট-বিরোধী আন্দোলন হলো, হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজপথে নেমে এসেছে। কয়েক বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জন্য শিশুরাও রাজপথে নেমেছে। একটা সড়ককে নিরাপদ করা যাচ্ছে না যেখানে, সেখানে কীভাবে সমাজকে নিরাপদ করবেন? নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শেষ হয়েছে, অথচ এখনও সড়ক নিরাপদ হয়নি। এখনও নগর-মহানগর বাসযোগ্য হয়নি; মানবিক গণতন্ত্রের পরিবেশ গড়ে ওঠেনি।

শিক্ষার্থীরা যখন কোনও রাজনৈতিক প্রশ্ন দেখে, এটা তাদের কতখানি যুক্ত করতে পারছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি বাজেট প্রণয়নে শিক্ষাকে যেমন অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, সেটিও তেমন নেই। এখন রাজনৈতিক আন্দোলন-সংঘাত চলছে, এখানে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের মনে একটা আত্মজিজ্ঞাসা ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান প্রভাষ আমিনের সঞ্চালনায় বৈঠকিতে আরও অংশ নিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) রেজিস্ট্রার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফয়জুল ইসলাম এবং ফিরোজা বাশার আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ শেখ মো. শহিদুল ইসলাম।

এই বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। এতে সহযোগিতা করেছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)।

আরও পড়ুন:

‘রাজনৈতিক কার্যক্রমে যথাযথ শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে’

‘শিক্ষার্থীদের ওপর রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রভাব' শীর্ষক বৈঠকি শুরু