বইমেলায় খণ্ডকালীন চাকরি: আয়ের পাশাপাশি বাড়ছে অভিজ্ঞতা ও যোগাযোগদক্ষতা

অমর একুশে বইমেলা মানেই লেখক-প্রকাশকদের আয়ের মৌসুম। তবে বইমেলা নিয়ে শুধু তারাই নন, অপেক্ষায় থাকেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। মেলায় তারা খণ্ডকালীন কাজ করে আয়ের পাশাপাশি নেন অভিজ্ঞতা।

মেলায় বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়ন কাজ করা এসব শিক্ষার্থী জানান, বইমেলার জন্য তারা সব সময় অপেক্ষা থাকেন। মেলায় তারা আয়ের পাশাপাশি অর্জন করেন অভিজ্ঞতা, বাড়াচ্ছেন যোগাযোগদক্ষতা। এ ছাড়া বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেও তারা এই কাজ করেন। আবার কেউ কেউ পরবর্তী চাকরিজীবনের জন্য প্রস্তুতিও নেন বলে জানান।

প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী ওয়ায়েজ আহমেদ ফাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেলায় কাজ করে প্রথমত নিজের হাত খরচের জন্য আয় হচ্ছে। পাশাপাশি আমি যোগাযোগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার যোগাযোগদক্ষতাটাও বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি মূলত একটু ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। বিভিন্ন লেখক-প্রকাশক ও ক্রেতাদের সঙ্গে ডিলিংয়ের ফলে আমার যোগাযোগদক্ষতা বাড়ছে, সঙ্গে অভিজ্ঞতাও বাড়ছে।

মেলার অভিজ্ঞতা পরবর্তী চাকরিজীবনের জন্য প্রস্তুতি

গ্রন্থকুটিরের কাজ করেন নিপা হালদার। বরিশাল বিএম কলেজের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বরিশাল থেকে আবেদন করে কাজ নিশ্চিত করেই ঢাকায় এসেছেন। নিপা বলেন, আমি যেহেতু শেষ বর্ষে তাই আমার চাকরিও দরকার। এ জন্য এখানে এলাম। এ কাজের ফলে যোগাযোগ বাড়বে। এই দক্ষতা দিয়ে পরে চাকরি পেতে ও করতে কাজে লাগবে।

অনন্যা প্রকাশের কাজ করা তিতুমীর কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ বলেন, আয়ের জন্যই খণ্ডকালীন কাজ করছি। তা ছাড়া আমরা যেহেতু শিক্ষার্থী, আমাদের বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, সেটিও একটি প্রভাব। এ ছাড়া বইমেলায় লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

গ্রন্থরাজ্যে কাজ করা সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী নেহাল মাহমুদ বলেন, আমি বই পড়তে ভালোবাসি। আর বইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং বইয়ের কাছাকাছি থাকতেই এখানে কাজ করছি। এ ছাড়া কিছুটা আয়ও হচ্ছে।

নতুন বই
অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিন নতুন বই এসেছে ১১৫টি। এর মধ্যে গল্প ১৪টি, উপন্যাস ৮টি, প্রবন্ধ ১০টি, কবিতা ৩৬টি, গবেষণা ৬টি, ছড়া ১টি, শিশুসাহিত্য ৪টি, জীবনী ৪টি, নাটক ১টি, ভ্রমণ ৪টি, ইতিহাস ২টি, ধর্মীয় ২টি, অনুবাদ ১৪টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি ও অন্যান্য ৬টি।

অনেকে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা ও বইয়ের কাছাকাছি থাকতেই এ কাজ করেন

মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি হেনা দাস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশ নেন ঝর্না রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার।

প্রাবন্ধিক জোবাইদা নাসরীন বলেন, হেনা দাস আজন্ম এক প্রতিবাদী সত্তা, শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী ও সংগঠক। নির্লোভ শুভ্রতার প্রদীপ হয়েই তিনি আলো ছড়িয়েছেন এবং সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে মানুষের জন্য পথ উন্মোচন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা। অর্জন ও শোষণমুক্তির লক্ষ্যে কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে জীবনকে উৎসর্গ করেন তিনি। এ জন্য ঔপনিবেশিক শাসন, শ্রেণি ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। মহিলা সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, গণনাট্য। সংঘ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হেনা দাস নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন।

লেখক বলছি
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী, কবি ফারহানা রহমান, গবেষক মিলটন কুমার দেব এবং কথাসাহিত্যিক ইকবাল খন্দকার।

বিভিন্ন লেখক-প্রকাশক ও ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে অনেকে খণ্ডকালীন কাজ নেন

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আলতাফ হোসেন, সাজজাদ আরেফিন, ওমর কায়সার, ইউসুফ রেজা, আসাদ কাজল, শাহেদ কায়েস এবং সারমিন মতিন মিতু। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী কাজী মদিনা, পলি পারভীন, জালালউদ্দীন হীরা।

এ ছাড়া ছিল নাজিয়া জাবীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্পর্শ ফাউন্ডেশন’, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘কথা আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র’ এবং মো. সঞ্জীব মিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘হাওলা’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া, সাইদুর রহমান বয়াতি, জহির আলীম, আবুল বাসার আব্বাসী ও বশির উদ্দিন সরকার।

মঙ্গলবারের সময়সূচি
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল সাড়ে ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশ নেবেন হরিশংকর জলদাস এবং ফারজানা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।