পেট্রোল ঢেলে আগুন: সাবেক স্বামীর পর মারা গেলেন সেই নারী চিকিৎসকও

নরসিংদীতে প্রাক্তন স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ চিকিৎসক লতা আক্তার (২৭) মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন মো. তরিকুল ইসলাম। একই ঘটনায় তিন দিন আগে এই হাসপাতালে মারা যান লতার সাবেক স্বামী খলিলুর রহমান। 

হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন লতা। তার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ ছিল বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। চিকিৎসকরা জানান, আগুনে তার ফুসফুস ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চিকিৎসাধীন ডা. লতা আক্তারকে দেখতে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এ সময় তিনি পুরো ঘটনা শোনেন এবং লতার চিকিৎসার সর্বশেষ খোঁজ-খবর নেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক, হৃদয়বিদারক ও দুঃখজনক। এমন ঘটনায় আসলে কেউই লাভবান হয় না, শুধু নিজেদেরই ক্ষতি হয়। পেট্রোলের আগুনে আমাদের এই চিকিৎসকের শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।’

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নরসিংদী থেকে এনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয় ডা. লতা আক্তারকে। সাবেক স্বামী খলিলুর রহমান পেট্রোল ঢেলে ওই চিকিৎসকের গায়ে আগুন দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই চিকিৎসকের গায়ে আগুন দেওয়ার পর তার সাবেক স্বামী নিজের গায়েও আগুন দেন। সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান তিনি।

লতার পরিবারের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, হাসপাতালের প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ নরসিংদীর রায়পুরায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাকে দাফন করা হবে।

লতা আক্তারের চাচা ফারুক মিয়া জানান, রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে গ্রামের বাড়িতে লতার সাবেক স্বামী খলিলুর রহমান (৩৫) তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় সে নিজের গায়েও আগুন ধরিয়ে দেয়। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খলিলুর মারা যান। তার মৃত্যুর সময় হাসপাতালে স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালের প্রক্রিয়া শেষে লতার লাশ নরসিংদীর রায়পুরায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে সেখানেই দাফন করা হবে।

ফারুক মিয়া আরও জানান, খলিলুর রহমান ও লতা আক্তারের দুই বছর আগে বিয়ে হয়। দুই মাস আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সালিশও হয়। সালিশে খলিলুরের সঙ্গে সংসার করবেন না বলে জানান লতা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত রবিবার লতার গ্রামের বাড়ি মরজালে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে পেট্রোল ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় খলিল। এসময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে। প্রথমে লতাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সেখান থেকে দুজনকেই রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। 

খলিলুরের ভাই মুদি দোকানি মফিজুর রহমান বলেন, কথা কাটাকাটির মধ্যে উত্তেজিত হয়ে খলিলুর ও লতা নিজেরাই নিজেদের শরীরে আগুন দিয়েছে। খলিলুর হাসপাতালে তাদের বলেছিলেন, দুজন-দুজনকে জড়িয়ে ধরে তারা গায়ে আগুন লাগান।

নরসিংদীর রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বলেন, খবর পেয়েছি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় লতার মৃত্যু হয়েছে। আগুন দেওয়ার ঘটনার পর লতার পরিবারের পক্ষ থেকে খলিলুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন:

আগুনে দগ্ধ চিকিৎসককে দেখতে হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী