মিলেমিশে ইফতার যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে রমজান সংযম ও ত্যাগের মাস। এই মাসে সারা দিন রোজা পালনের পর উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন হয় ইফতারের। আর এই আয়োজনকে বিশ্বের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানাভাবে আয়োজন হয় ইফতারের। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত ইফতার সবার নজর কাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে মিলেমিশে একসঙ্গে ইফতারে বসা যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতির নাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), বিজয় একাত্তর হল, জসিম উদ্দিন হল, মহসিন হল, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মাঠে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ উদ্যোগে সম্মেলিত ইফতার করেন। বিভিন্ন হলের ছাদে বিভিন্ন সেকশনের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেন ব্যাচভিত্তিক ইফতারের। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংগঠন, সামাজিক সংগঠনের ব্যানারেও আয়োজন হয় ইফতার পার্টির।

একসঙ্গে বসে ইফতারে সম্প্রীতির অনুভূতি পান শিক্ষার্থীরা (ছবি: প্রতিবেদক)

টিএসসি মাঠে ইফতার করতে আসা শাহরিয়ার নাহিদ বলেন, সারা দিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যার ইফতার একটি বিশেষ মুহূর্তে নিয়ে আসে। আর বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে ইফতার করতে পারাটা এক স্বর্গীয় অনুভূতি দেয় আমাদের। দিন শেষে সবাই একটি বিশেষ আয়োজনে সম্মিলিত হয়, সবার সঙ্গে সম্প্রীতি তৈরি হয়।

স্যার এ এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, একা একা করার চেয়ে সম্মিলিতভাবে ইফতার করায় অন্যরকম একটা তৃপ্তি আসে। সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার তৈরি করা, কথা বলা, দোয়া করা, ইফতারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা, এ যেন উৎসবমুখর দারুণ এক অনুভূতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খোলা জায়গায়, বিভিন্ন হলের ছাদে ও মাঠে বসে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন (ছবি: প্রতিবেদক)

সূর্য সেন হলের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করার মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুরা সব একত্রিত হওয়া, দেখা সাক্ষাৎ হয়। গতকাল আমরা প্রথম বর্ষের গণরুমের সব বন্ধু মিলে যেমনটা করেছি। বিভিন্ন সময়ে গণরুমে আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে সংখ্যাটা হয় ৩৭। একসঙ্গে থাকা, কিন্তু প্রথম বর্ষ থেকে ধাপে ধাপে ফাইনাল ইয়ারে এসে সবাইকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়।

একই হলের মাঝেও অনেক দিন পর পর দেখা হওয়ার একটি মাধ্যম এই ইফতার, এ কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক বছর ইফতারের উছিলায় গ্রুপের সবার দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ হয়, পুরানো অনেক কথা ওঠে, বেশ ভালোই একটা মুহূর্ত। ইফতার ইবাদতের একটি অংশ এবং সব ইবাদতই কোনো না কোনোভাবে সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়ন বা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমনটা সব সম্পর্কে দেখা যায়।

বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে ইফতারেই স্বর্গীয় শান্তির খোঁজ পান (ছবি: ফোকাস বাংলা)

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর ইফতারকে বিশ্ব সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনেসকো। সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, ইফতার রমজান মাসে সব ধরনের ধর্মীয় বিধান মানার পর সূর্যাস্তের সময় মুসলমানদের পালনীয় রীতি। সংস্থাটি মনে করে, এই ধর্মীয় রীতি পরিবার ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে এবং দান, সৌহার্দ্যের মতো বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসে।