মহাসড়কে নসিমন-করিমন (ইঞ্জিনচালিত ভ্যান), রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা, সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও থামানো যাচ্ছে না। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, এসব যান মহাসড়কে চলার অনুমোদন নেই। বিশাল হাইওয়ে এলাকায় পাহারার চোখ এড়িয়ে এগুলো চলাচল করে। দেখামাত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের ভাষায়—ব্যাপারটা অনেকটা জনপ্রিয় কার্টুন ক্যারেকটার টম অ্যান্ড জেরির মতো। কার্টুন চরিত্রে ইঁদুর ছানা জেরির কাছে সবসময় পরাস্ত হয় বিড়াল টম। প্রশ্ন হলো, মহাসড়কে কে টম আর কে জেরি?
দুর্ঘটনা রোধে ২০১৫ সালের আগস্টে দেশের ২২টি প্রধান মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এরপর, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সব প্রধান মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে সেই নির্দেশকে আরও জোরদার করেন হাইকোর্ট। গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদনবিহীন ইজিবাইক, নসিমন, করিমন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরির বিষয়টিও জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু নির্দেশনা, নিষেধাজ্ঞা, নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় নানান সমস্যা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৯০২ জন। ২০২২ সালের চেয়ে বিদায়ী ২০২৩ সালে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া ও এসব যানবাহন অবাধে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অবাধে ইজিবাইক চলছে। এটা সবাই জানে, এসবের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার-পাঁচগুণ বেড়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে থ্রি হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি নামে। বর্তমান সরকার গত ১৫ বছরে সড়কে অবকাঠামো নির্মাণে যতটা সাফল্য দেখিয়েছে, ঠিক ততটা ব্যর্থ হয়েছে সড়কে নৈরাজ্য ঠেকাতে।’ তিনি আশা করেন, নতুন মেয়াদে সরকার দুর্ঘটনা কমাতে উদ্যোগী হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে এত দীর্ঘ, পুরোটা পাহারা দেওয়ার জনবল নেই। ফলে যেসব জায়গায় পুলিশ থাকে, তারা এই বাহনগুলো আটক করে ফেরত পাঠায়। ব্যাপারটা অনেকটা টম অ্যান্ড জেরির মতো হয়ে গেছে বলতে পারেন।’