সুন্দরবন ধ্বংসে ভারততোষণ করে চলেছে সরকার: খান আসাদুজ্জামান মাসুম

খান আসাদুজ্জামান মাসুমসুন্দরবন রক্ষায় সাত দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিনের জনযাত্রা শুরু করেছে তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগেও এ বিষয়ে এমন লংমার্চ রোডমার্চের কথা শুনেছে দেশের মানুষ, জনযাত্রা তা থেকে আলাদা কোথায় কিংবা যখন রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর কাজ শুরু হয়ে গেছে তখন এই জনযাত্রা কী ধরনের প্রভাব ফেলবে বা কেবলই লোক দেখানো কিনা এসব নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম।

বাংলা ট্রিবিউন: রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে, শুরু হয়ে যাওয়া প্রকল্পের মধ্যে এখন  এধরনের জনযাত্রা করে কী লাভ?

আসাদুজ্জামান মাসুম: আমরাতো আন্দোলন ধারাবহিকভাবেই করেছি।সরকার আমাদের আন্দোলনের মধ্যেই কাজ শুরু করেছে। আমাদের যুক্তিগুলো শুনেও প্রকল্পের কাজ বন্ধ না করে বরং ত্বরান্বিত করেছে। এভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকার বহুজাতিক কোম্পানি ও ভারতের স্বার্থরক্ষা করছে, ভারতের সঙ্গে সখ্যতা অটুট রাখতে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য একগুয়েমি করছে। আর এটা করতে গিয়ে জাতির সঙ্গে এই প্রকল্পটি নিয়ে মিথ্যাচার, প্রতারণা, দমনপীড়নের আশ্রয়ও নিয়েছে। রামপাল কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে ক্ষতিকর দিক জনগণের সামনে আসতে যতোরকমের বাধা দেওয়া যায়, দিয়েছে।

যেমন এখানে ৪৭ লাখ টন কয়লা পোড়ানো হবে যার আট লাখ টন নানা রাসায়নিক বর্জ্য থাকবে। এতে করে সুন্দরবন যে ধ্বংস হয়ে যাবে এটুকু বুঝতে খুব বেশি পড়ালেখা করা লাগে না। বিভিন্ন মহল আর মন্ত্রী এ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন ও দিচ্ছেন তাতে স্পষ্ট হয়, তারা জানেন তারা ক্ষতিকর একটা কাজে যুক্ত হয়েছেন। সর্বশেষ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা আরও স্পষ্ট হয় যখন কিনা তিনি বলেন,‘এই প্রকল্পে ক্ষতি হলেও এটা এগিয়ে নিতে হবে।’ আমার বিবেচনায় এটা ভারত তোষণ নীতির বহিঃপ্রকাশ।

বাংলা ট্রিবিউন: আমরা দৃশ্যত দেখছি অবকাঠামোগত কাজগুলো প্রায় মাঝ পর্যায়ে এখন। পরিকল্পনা অনুযায়ীই প্রকল্প এগিয়ে চলেছে। এ পর্যায়ে জনযাত্রার বাইরে অন্য কোনও ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি কাজের হতো কিনা?

আসাদুজ্জামান মাসুম: সরকারকে চাপে রাখার জন্য জনযাত্রা যেমন জরুরি, জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্যও জরুরি। আমরা চাই এই ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের বোধদয় হয় এবং এই বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করে। মনে রাখবেন আমরা কেউ উন্নয়নের বা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধী না। সরকার বিদ্যুৎ প্রকল্প, দেশের উন্নয়ন করুক, তবে সেটা অবশ্যই সুন্দরবনকে রক্ষা করে।

 

লংমার্চ ২০১৩বাংলা ট্রিবিউন: কানসাট বা ফুলবাড়ির ক্ষেত্রে দেখেছি সেখানকার আন্দোলনগুলোতে স্থানীয়রা শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। রামপালের ক্ষেত্রে এমন স্থানীয় প্রতিরোধ কি কম দেখা যাচ্ছে?

আসাদুজ্জামান মাসুম: ওখানে জনবসতি এমনিতেই একটু কম। তারপরও তারা আন্দোলনে নেমেছিল কিন্তু সরকার তাদের দমনপীড়ন করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে সেখানকার সাধারণ মানুষ এখন বেশ আতঙ্কিত। যারাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তারাই সরকার ও সরকারি দলের দমন পীড়ন এবং মামলার মুখে পড়েছে। ফলে কানসাট, ফুলবাড়ির মতো গণআন্দোলন এখানে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।এখনও যারা বসবাস করেন তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে ও অসহায়ত্বের মধ্যে বসবাস করছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এই জনযাত্রার উদ্দেশ্য কি? আগে আপনার লংমার্চ, রোডমার্চ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন, সেটার সাথে জনযাত্রার পার্থক্য কি?

আসাদুজ্জামান মাসুম: এই জনযাত্রার উদ্দেশ্যে হচ্ছে সুন্দরবন ধ্বংসে রামপালে যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সেটা আমরা সুন্দরবনের হোক চাই না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাত দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। সরকার কর্ণপাত করেনি। এবার আমরা এটাকে জনযাত্রা বলছি, কারণ কেবল ঢাকা থেকে যাত্র হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জনগণ যাত্রা করবেন সুন্দরবন অভিমুখে। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষগুলো সুন্দরবনসংলগ্ন কাটাখালিতে এসে জড়ো হবেন। সেখানে মূল সমাপনী ঘোষণা পাঠ করা হবে।জনগণকে উজ্জীবিত করার জন্য জনযাত্রা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

সুন্দরবন রক্ষায় সংবাদ সম্মেলন

বাংলা ট্রিবিউন: সুন্দরবন তো জাতীয় ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশে পরিবেশবাদীদের সংখ্যা কম না। তারপরও আপনাদের কর্মসূচিগুলো বড় আকার পাচ্ছে না কেন? গণমাধ্যমগুলোতে এখন কম দেখা যাওয়ার কারণে কি?

আসাদুজ্জামান মাসুম: গণমাধ্যমগুলো যাতে এ প্রকল্পের বিরোধী স্বর তুলে না ধরে সে ধরনের নিয়ন্ত্রণ সরকারের দিক থেকে আছে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা এবারের জনযাত্রার প্রস্তুতি বিষয়ে জানাতে যে সংবাদ সম্মেলন করেছি সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনও গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত হননি। কিন্তু এই সুন্দরবন উজাড় করে দেওয়া আমাদের কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা কি তারা জানেন না? জানেন। কিন্তু কোন টকশো, কোন বিশেষ প্রতিবেদনে এর উল্লেখ আমরা দেখি না। সুন্দরবন আমাদের কেবল ঐতিহ্য না, অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত এটা নিয়ে সিজন্যাল কিছু কথাবার্তা বলে কি হবে? আমরা চাই গণমাধ্যম এটাকে কেবল একটা জনযাত্রা হিসেবে না দেখে নিজেরা সামিল হয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

/টিএন/