ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ তোফাজ্জল হোসেনকে (৩০) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। আরও তথ্য পেতে শাহবাগ থানা পুলিশ তাদের রিমান্ড চাইবে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানা অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে যুবকে হত্যার ঘটনায় গতকাল ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের কোর্টে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমরা তাদের রিমান্ড চাইবো। এ ঘটনায় যারাই জড়ির তাদের সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারদের কাছ থেকে কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা বিভিন্ন রকম তথ্য দিচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনও এ বিষয়ে কিছু প্রকাশ করছি না। তদন্ত শেষ হলে তা জানানো হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন– পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া (২৫), মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া (২১), পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ (২৪), জিওগ্রাফির আল হোসেন সাজ্জাদ এবং অপর শিক্ষার্থী ওয়াজিবুল আলম।
ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখা উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এছাড়া ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, জড়িতদের চিহ্নিতকরণ ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে।
এর আগে এ ঘটনায় ডিএমপির শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার সময় এক যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগে তারা ওই যুবককে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুসি মারেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। পরে তিনি মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ান। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্টাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।
সংবাদ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তাকে ঢাক মেডিক্যাল কলেজ হাস জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনা শাহবাগ থানায় অবহিত করলে পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা করা হয়।
স্বজন সূত্রে জানা গেছে, তোফাজ্জলের পরিবারের কোনও সদস্য আর বেঁচে নেই। তার বাবা আবদুর রহমান মারা গেছেন ২০১১ সালে, মা বিউটি বেগম মারা যান ২০১৩ সালে এবং ভাই পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নাসির উদ্দিন মারা যান ২০২৩ সালে। পরিবারের কেউ না থাকায় কখন, কোথায় থাকেন তা কেউ খোঁজও রাখেন না।
তোফাজ্জল ২০০৯ সালে চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০১১ সালে সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। বড় ভাই মারা যাওয়ার পর তাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না। স্বজনরা জানান, কয়েক বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন তোফাজ্জল।
আরও পড়ুন:
নির্মমভাবে পেটালো যারা, এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে?
ঢাবি ও জাবিতে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নির্মমভাবে ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের হাতে নিহত এই তোফাজ্জল কে?
ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ, দিলেন আল্টিমেটাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরে ছাত্রলীগ নেতা নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ