ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘটনার ‘মোটিভ’ জানাতে পারেননি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জানতে চাইলে প্রথমে ডিএমপি কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলামকে বিস্তারিত বলার অনুরোধ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নাসিরুল ইসলাম প্রাথমিক তদন্তে এটিকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ ঘটে যাওয়া ঘটনা বলেন এবং আসামি রিমান্ডে আছে জানিয়ে নেপথ্যের কারণ জানার ‘চেষ্টা করবেন’ বলে জানান।
কিন্তু রহস্য উদঘাটনের যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'মামলা তো ডিটেক্ট হয়ে গেছে।'
এর আগে, গত ১৩ মে রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল নেওয়া হলে চিকিৎসক ঘোষণা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার মোটিভের বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসার একটা চক্রের ‘নেতা’ মেহেদীর গ্রুপকে দায় দেন।
তিনি বলেন, মেহেদী গ্রেফতার আছে এবং তার দেখানো মতে উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ার উদ্ধার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়। মেহেদী গ্রুপের একজন রাব্বী, যার হাতে একটা ট্রেজার গান (যেটিতে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয়) ছিল। ট্রেজার গানটি দেখালে সাম্য সেটা সম্পর্কে জানতে চায়। জানতে চাওয়ার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এসময় অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের ভেতরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির একটা পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ডটা ঘটে।”
হত্যাকাণ্ডে ‘এখন পর্যন্ত’ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাম্যকে ছুরিকাঘাত করেন ওই গ্রুপের রাব্বী নামে একজন বলে জানান তিনি।
সাম্যর সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমরা আপাতত যতটুকু পেয়েছি তাতে সাম্য এবং তার দুই সহপাঠী খাবারের জন্য যায়। খাবারের জন্য গেলে তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনা ঘটে। যখন ট্রেজার গানটা শো করে, তাদের সন্দেহ হয়। জিনিসটা কী দেখার জন্য এবং তার কাছ থেকে এটা নেওয়ার জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ করে তার কাছে যায়। কাছে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা এই ঘটনা ঘটায়।”
তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলমান আছে জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ড, আপাতত আমাদের তদন্তে এ পর্যায় পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আর কোনও ঘটনা আছে কিনা, অন্য কোনও বিষয় আছে কিনা, সেটা নিবিড়ভাবে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার ‘মূল আসামি’ মেহেদী রিমান্ডে আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “রিমান্ডে আসার পর মূল মোটিভটা কী ছিল তার কাছ থেকে আমরা বের করার চেষ্টা করবো। আর এর পাশাপাশি নেপথ্যে অন্য কোনও ঘটনা আছে কিনা সেটার বিষয়ে আমাদের নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে। আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে, যেখানে যে ধরনের কানেকশন আছে, সব কানেকশন আমরা খুঁজে দেখবো— ফাইনালি নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা।”
তবে ঘটনাটিকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে মনে করছেন সাম্যর বড়ভাই সরদার আমিনুল ইসলাম। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ‘কারণ’ না জানতে পেরে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু পুলিশের কর্মকাণ্ডে হতাশ। কী কারণে মারলো, মোটিভটা কী?”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক কারবার প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরুল ইসলাম সেখানে তিনটি গ্রুপের কথা জানিয়ে বলেন, “আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তাদের হিসাবে তিনটা ভাগে ভাগ করা। একটা তিন নেতার মাজারের দিকে, আরেকটা মাঝখানে, আরেকটা ছবির হাটে। তিন অংশে তিনটা গ্রুপ আছে। তারা মাদক ব্যবসা করে। এটা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
একটা গ্রুপের দায়িত্বে আছেন মেহেদী। গ্রেফতার আট জনই মেহেদী গ্রুপের। আরও দুই গ্রুপের কার্যক্রম সম্পর্কেও জানি।”
গ্রুপগুলোর নাম ‘তদন্তের স্বার্থে’ না বললেও তাদের আইনের আওতায় এনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ‘মাদকমুক্ত’ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত বলেন, “বিশ্বব্যাপী যেখানে মাদক ব্যবসা বা মাদকের ইউজার, সেখানে অস্ত্র থাকে। আপনি আমেরিকার কথা বলেন, কলম্বিয়ার কথা বলেন, সারা পৃথিবীতে মাদকের ব্যবসা আছে। মাদকসেবীও আছে, মাদক ব্যবসায়ীও আছে। যেখানে মাদক ওইখানে অস্ত্র আছে।”
ঢাকা শহরে সম্প্রতি কয়েকটি খুন ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আমরা ডিটেক্ট করি। যার ফলে ক্রাইম সিচ্যুয়েশন, অপরাধের যে চিত্র সেটা প্রমাণ করে যে অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
বাড্ডায় খুনের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের দয়া করে সময় দেন। একটা ঘটনা ঘটলেই আমরা বলে ফেলাবো, এরকম কোনও জাদুমন্ত্র আমাদের নাই।”
অপরাধ দমনে সব ধরনের ‘প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা’ নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “সব ঘটনা প্রিভেন্টিভ মেজার্স দিয়ে ঠেকানো যায় না।”