বাংলা ট্রিবিউনকে খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল

চাঁদাবাজি ও পুলিশি উৎপাতের কারণে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে

খন্দকার রফিকুল হুদা কাজলচাঁদাবাজি ও পুলিশি উৎপাতের কারণে গণপরিবহনে নৈরাজ্য বিরাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীকেন্দ্রিক পরিবহন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের সভাপতি খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল। তিনি বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সবখানে একই অবস্থা। এই নৈরাজ্য থামাতে পারলে গণপরিবহনে যাত্রীসেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব। বুধবার দুপুরে রাজধানীর নিউ এলিফেন্ট রোডে তার নিজ কার্যালয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

বাংলা ট্রিবিউন : আপনি বলছেন চাঁদাবাজির কথা। এটা কারা করছেন? 

খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল : চাঁদাবাজি কারা করছেন, এটা সবাই জানেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না। কেননা সরকারি দলের পরিচয়ে এ চাঁদাবাজি হচ্ছে। চাঁদাবাজরা মালিক ও শ্রমিক নেতা সেজে এটা করছেন। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। চাঁদাবাজরা এতই শক্তিশালী যে, কেউ ভয়ে মুখ খুলতে চান না।
এই দেখুন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার বলে গত বছর আমার নামে এগারোটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে কাজকর্ম ফেলে আমাকে নিয়মিত কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। এত নির্যাতন কজনে সইতে পারেন?

 বাংলা ট্রিবিউন: সরকারের কাছে অভিযোগ করেন না কেন?

খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল : কার কাছে অভিযোগ করব? যাকে বলি, তিনিই বলেন ম্যানেজ করে চলতে। এছাড়া শুধু আমি নই, সরকারি দলের লোকজনও যদি পরিবহন ব্যবসায় আসেন, তারা চাঁদাবাজির শিকার হন। অবস্থা এমনই হয়েছে যে, চাঁদা না দিলে গাড়ির চাকা ঘোরে না।

 বাংলা ট্রিবিউন: চাঁদাবাজি কি শুধু বর্তমান সরকারের আমলেই হচ্ছে?

খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল : না। বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টির আমলেও হয়েছে। তবে সেটা ছিল নিয়ন্ত্রিত। বর্তমান সরকারের আমলে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কারও নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না।

বাংলা ট্রিবিউন: একটু আগে বললেন, পুলিশের উৎপাতের কথা। এটা কেমন উৎপাত?

খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল : নগরীর প্রতিটি থানায় ট্রাফিক পুলিশের বিট রয়েছে। এ সব বিটের এলাকা দিয়ে চলাচলকারী প্রতিটি বাসকে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে ট্রাফিক পুলিশ একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করে।

 বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা প্রতিবাদ না করে চাঁদা দেন কেন?

খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল: অধিকাংশ গাড়ির কোনও না কোনও ত্রুটি রয়েছে। এর সুযোগ নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ঘুষ দিলে ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি ভালো হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে মালিকরা পুলিশকে ঘুষ দিতে বাধ্য হন। পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ বাস ঠিকই চলছে। পুলিশ যদি ঘুষ না নিত, তাহলে বাস মালিকদের অনেক টাকা বেঁচে যেত। এর সুফল পেতেন যাত্রীরা। আর পুলিশকে ম্যানেজ করার পেছনে খরচের টাকা তুলতে মালিকরা সুযোগ পেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করেন।

 বাংলা ট্রিবিউন: কিছুদিন আগে গণপরিবহনের অন্যতম জ্বালানি ডিজেলের দাম লিটারে তিন টাকা কমেছে। কিন্তু গণপরিবহনের ভাড়া কমেনি। এই ভাড়া নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?

খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল: জ্বালানির দাম কমলেও গণপরিবহনে যাত্রীভাড়া কমানোর কোনও যুক্তি দেখি না। কেননা, ভাড়া নির্ধারণে যেসব সূচক রয়েছে তার মধ্যে জ্বালানি একটি। বাকি বিশটি সূচক ঊর্ধমুখী।  ডিজেলের দাম কমেছে লিটারে তিন টাকা। কিন্তু দশ হাজার টাকার টায়ারের দাম যে ত্রিশ হাজার টাকা হয়েছে সেই খবর কে রাখে? কয়েক গুণ বেড়েছে ইঞ্জিন অয়েল, টিউব, যন্ত্রাংশের দামও।

আরও পড়তে পারেন: নৌযান শ্রমিকদের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন বেতন কাঠামো

এ ছাড়া যে ক’টি সূচক ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি ও ট্রাফিক পুলিশের ঘুষের কথা উল্লেখ নেই। এটা গোপনে দিতে হয়। আমি মনে করি, ভাড়া নির্ধারণের সময় এ বিষয়গুলো রাখলে ভালো হয়। আমি মনে করি, শুধু জ্বালানির দাম পরিবর্তন হলেই ভাড়া পুনঃমূল্যায়ন করা হবে, এটা না করে প্রতি বছর জুন মাসে ভাড়া পর্যালোচনা করা দরকার।

আরেকটা বিষয় অত্যন্ত জরুরি যে, গণপরিবহনের বাসগুলো যেন সব সময় সিএনজি ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হোক। এতে ভাড়া বাড়বে না। পণ্যপরিবহনের ভাড়াও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। সরকার যদি চায় তাহলে প্রাইভেট কারে সিএনজির ব্যবহার বন্ধ করতে পারে।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, গণপরিবহনের ভাড়া কমানো নিয়ে রাজনীতি রয়েছে। তাই জনগণকে দেখানোর জন্য হলেও সরকার ভাড়া কমাতে পারে।

/এমএনএইচ/