একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

বাজেটে অসম্ভব টার্গেট দেওয়ার কোনও মানে হয় না

মির্জ্জা আজিজুল ইসলামজাতীয় বাজেট বাস্তবমুখী হলে ভালো হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, উচ্চাভিলাষী ও অসম্ভব টার্গেট দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। রবিবার  বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

বাংলা ট্রিবিউন: আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: বাজেট বাস্তবমুখী হলে ভালো হবে। উচ্চাভিলাষী ও অসম্ভব টার্গেট দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটকে ভিত্তি ধরলে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়বে ২৯ শতাংশের মতো, যা আমার কাছে অবাস্তব বলে মনে হয়। 

বাংলা ট্রিবিউন: আসন্ন বাজেটের বড় দুর্বলতাগুলো কী কী?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: বাস্তবতার সঙ্গে বাজেটের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে কমে আসছে। কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। বিনিয়োগও বাড়ছে না। একইভাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ছে না। কিন্তু বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। কথা হলো, অর্থ বরাদ্দ দিলেই হবে না, সেটা ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কিনা, কাজ সময়মতো শেষ হচ্ছে কিনা—তা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনও প্রকল্পই সময়মতো শেষ হয় না।

বাংলা ট্রিবিউন: আগামী ২ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বাজেট কতটা গ্রহণযোগ্য বলে আপনি মনে করেন?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: চলতি অর্থবছরে কাটছাঁটের পর সংশোধিত বাজেট দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা ধার্য করা হচ্ছে। এর ফলে বাজেটের আকার বাড়বে ২৯ শতাংশের মতো, যা বাস্তবায়ন হওয়া কঠিন।

বাংলা ট্রিবিউন: বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে কারণ কী?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: টার্গেট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বাজেট বাস্তবায়নে প্রাক-প্রস্তুতি জরুরি। এছাড়া প্রশসনিক দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। দুর্নীতি আরেকটি কারণ। দুর্নীতির কারণে সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। অথচ প্রতিবছরই বিশাল আকারের এডিপি হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু যখন বাস্তবায়িত হয় না, তখন সাত-আট মাস পর কাটছাঁট করে সেটা আবার কমিয়ে আনা হয়। আর বছরের শেষ দুই-তিন মাসে তাড়াহুড়া করে সেটা বাস্তবায়ন করা হয়। এতে করে অর্থ খরচ হয় ঠিকই, কিন্তু কাজের গুণগত মান ভালো হয় না। এই ধরনের রাস্তা-ঘাট, সেতু-কালভার্ট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়।

বাংলা ট্রিবিউন: আসন্ন বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ কী ?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম:  বাজেট বাস্তবায়নই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলা ট্রিবিউন: বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ভালো সূচক কি একেবারেই নেই?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম:  বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এতে এক ধরনের স্বস্তিতে বাজেট উপস্থাপন করতে পারছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া মূল্যস্ফীতিও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। রফতানি আয়ও বেশ খানিকটা বেড়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স নেগেটিভ।

বাংলা ট্রিবিউন: আসন্ন বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে কি পদক্ষেপ নিতে হবে?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: রা স্তাঘাট ও অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ করে এডিপি সময়মতো শেষ করতে হবে। দুর্নীতি থেকে সরে আসতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। করের আওতা বৃদ্ধি করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আর রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাস্তবমুখী উদ্যেগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে না। এ কারণে আসন্ন বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আর এগুলো ঠিকমতো চললে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও হতে পারে।

বাংলা ট্রিবিউন: আসন্ন বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ এখনও স্থবির হয়ে আছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনও আস্থা আসেনি। এ কারণে বিনিয়োগ খুব একটা বাড়ছে না। তবে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ আছে। বিশেষ করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। তবে দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, সেটাকে অব্যাহত রাখতে পারলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়তে পারে।

আরও পড়তে পারেন: খোলা ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

/এমএনএইচ/