কিন্তু নোটিশ না দিয়ে হুট করে চা-বাগান বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। নেই চিকিৎসা সেবা। সেখানে গর্ভবতী নারীরাও অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
এর আগে গত ১৭ মে থেকে হঠাৎ মালিক পক্ষ শ্রমিকদের তলব বন্ধ করে দেয়। এছাড়া বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিচ্ছিন্ন করা হয় কারখানা ও বাসাবাড়ির সংযোগ। এ অবস্থায় চা-বাগানের নিয়মিত ৪০০ শ্রমিকসহ প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। খাদ্যাভাব, চিকিৎসার অভাবের মধ্যে দেখা দেয় চরম অসন্তোষ। শ্রমিকদের দাবি, গত ১৫ সপ্তাহ ধরে বৈকুণ্ঠপুর চা-বাগানে শ্রমিকদের রেশন মজুরি বন্ধ রয়েছে। এমনকী ২৬ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও আত্মসাৎ করেছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন কয়েকজন ঢাকা থেকে সাহায্য দিতে গিয়ে দেখেন, ছয় মাস থেকে আট মাসের গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কেউ নেই। এ দলের একজন তৃষ্ণা সরকার। তিনি বলেন, সাধারণত বাগান বন্ধ হওয়ার আগে শ্রমিকদের জানানো হয়। পাওনা বেতনাদি মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এ রকম কিছুই তাদের ক্ষেত্রে করা হয়নি। শ্রমিকরা শুনেছেন তাদের বাগান আবুল খায়ের গ্রুপ কিনে নিতে চেয়েছেন। সে প্রক্রিয়া কতদূর, তা জানা না গেলেও শ্রমিকদের আশা নতুন মালিক তাদের পাওনা বেতন মেটাবেন। শ্রমিকদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং তাদের অধিকার নিয়ে কথা হয় তৃষ্ণার সঙ্গে।
বাংলা ট্রিবিউন: সেখানে আসলে কী ঘটেছিল?
তৃষ্ণা সরকার: মালিক চা-বাগান নাও রাখতে পারেন। কিন্তু সাধারণত চার/পাঁচ মাস আগে শুনানির ব্যবস্থা করা হয়। তিনি চা-বাগান রাখতে চান না জানিয়ে শ্রমিকদের বললে তারা আশেপাশের বাগানে কাজ নিয়ে নিতেন। কিন্তু তা না করে শ্রমিকদের পাওনা না মিটিয়ে বন্ধ করে দেন বাগান। কত টাকাইবা বেতন পেতেন শ্রমিকেরা। ২৩ কেজি চা পাতা তুলে ৮২ টাকা মজুরি পান। আর রেশনই ভরসা। দুটোই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা হুট করে কোনও কাজ পাননি এবং না খেতে পেয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তারা আবার চাকরি কবে পাবেন বা এ সময়ের টাকা আদৌ পাবেন কিনা তা তাদের জানা নেই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা সেখানে যাওয়ার আগে কোনও সাহায্য গিয়েছিল?
তৃষ্ণা সরকার: শ্রমিকরা একধরনের স্বস্তিতে আছেন। আসলে তারা এত সহজ সরল, তাদের সঙ্গে না মিশলে বোঝা যাবে না। তারা ভাবছেন, বাগানে নতুন মালিক এলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে। মালিকের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ হচ্ছে, তারা শ্রমিকদের বলছেন, নতুন মালিক এই শ্রমিক কর্মচারীদের কাজে রাখবেন। আমার প্রশ্ন জাগে, সেখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর আসলে কাদের সঙ্গে কী চুক্তি ছিল। তারা কেন এই অসহায় শ্রমিকদের ন্যূনতম চিকিৎসা দিতে আসবেন না। বাগান বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে! বাগানের বাইরে এই নারীরা কোথাও যাননি কখনও। একজন এরই মধ্যে আমাকে বলেন, বাগানের সবই তো আমাদের জীবন। এখানেই তো সব!
ছবি: তৃষ্ণা সরকার
/ইউআই/এবি/