বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ

যে মসজিদের পাশে শায়িত কবি নজরুল

বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ।

মসজিদের শহর ঢাকা। আর ঢাকার প্রাণ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে আছে নান্দনিক নকশার ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ। মসজিদটিকে 'মসজিদুল জামিয়া ঢাবি' বলেও ডাকা হয়।

শাহবাগ থেকে টিএসসি যাওয়ার পথে চারুকলা অনুষদের পর ডান দিকেই পড়বে ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদ। মসজিদের ডান পাশে রয়েছে ঢাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বামে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি। মসজিদের পেছনের দিকে ছিল ঘন সবুজ বৃক্ষের বাগান। এখন সেখানে সামাজিক বিজ্ঞান ভবন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসে বঙ্গবন্ধুর সরকার। ১৯৭৬ সালে কবিকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ওই বছর নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। একই বছরে ২৯ আগস্ট তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার আগেই লিখে গিয়েছিলেন অমর সেই গান- ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়। কবির ইচ্ছানুযায়ীই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

কবির সমাধির পাশে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ঢাবি'র সাবেক ভিসি ড. ওসমান গনি ও শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধি।

নির্মাণশৈলী, কারুকাজ ও নান্দনিকতায় মসজিদটি অনন্য। রয়েছে দু'টি মিনার, ভেতরে গোলাকার বেশ কিছু পিলার, কারুকাজখচিত দরজা-জানালা ও ঝাড়বাতি। ২৩টি সারির প্রতিটিতে ৭৫-৮০ জন মুসুল্লি দাঁড়াতে পারেন। বারান্দায় আছে আরও ১০টি সারি।

১৯৬৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালীন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ওসমান গনি ও অন্যান্য প্রফেসরের উপস্থিতিতে মসজিদটির ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। মসজিদটি রমজান মাসের কোনও এক শুক্রবার উদ্বোধনের করা হয়। ৫ বিঘা জমির ওপর এটি প্রতিষ্ঠিত।

এই মসজিদে জড়িয়ে আছে অনেক শিক্ষার্থীর স্মৃতি। ২০০৮-০৯ সেশনের শিক্ষার্থী হাসান আজিজ স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার আবেগের জায়গা। অনেক স্মৃতি এই ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সঙ্গে জড়িত স্মৃতিগুলো একটু বেশি মধুর। প্রতি শুক্রবার মসজিদের সামনে থেকে খোরমা কিনে বন্ধুর মিলে ভাগাভাগি করে খেয়ে জুম'আর নামাজ আদায় করতাম। এখানে এলে মনে হতো কারও প্রতি বিদ্বেষ রাখা উচিত নয়।'

মসজিদের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ঢাবি উপাচার্য। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে তা প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান।