তাদের অভিমান ভাঙালেন খালেদা জিয়া

বিএনপিপন্থী পাঁচ বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দীন আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহবুব উল্লাহ, ইউসূফ হায়দার ও মাহফুজ উল্লাহদলের প্রতি একনিষ্ঠ পাঁচ বুদ্ধিজীবীকে ছয় মাস পর আবার ডাকলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তারা দলের কার্যক্রমে অনেকটা অবহেলিত ও নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ‘অভিমান’ করে দল থেকে দূরে থাকা এই পাঁচজনকে রাজধানীর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চা-চক্রে ডেকে তাদের সঙ্গে কথা বললেন দলীয়প্রধান। আগের মান-অভিমান ভেঙে দলের ভালোমন্দের সহযোগী হিসেবে পরামর্শ বিনিময় অব্যাহত রাখার জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। চা-চক্রে অংশ নেওয়া বুদ্ধিজীবীরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আশা আছে, পথে বের হন।’

গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানায়, ‘রবিবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাত ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও লেখক মাহফুজ উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসূফ হায়দার। প্রায় একই সময় নিজের বাসভবন ফিরোজা থেকে এখানে এসে পৌঁছান খালেদা জিয়া।
এর আগে গত ১০ মার্চ রাতে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত ‘বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের অভিমান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিএনপিন্থী শীর্ষ বুদ্ধিজীবীরা দলের উপেক্ষার শিকার। দীর্ঘদিন ধরেই দলে তাদের কোনও পরামর্শ গ্রহণ করা হয় না। এমনকি খালেদা জিয়াও তাদের কোনও উৎসাহ দেননি।’ এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র দু’দিনের মধ্যেই বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে চা-চক্রে মিলিত হলেন খালেদা জিয়া।
চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্রটি জানায়, ব্যক্তিগত অভিমান থাকলেও বিএনপি প্রধানের চা-চক্রের আমন্ত্রণেই বুদ্ধিজীবীরা গুলশানে এসেছেন। এই চা-চক্রে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে তাদের বৈঠক শেষ হয় বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি খালেদা জিয়াকে পরামর্শমূলক একটি খোলা চিঠি দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সাড়ে তিন হাজার শব্দের ওই চিঠিতে দলে গণতন্ত্রের চর্চা এবং জামায়াতে ইসলামী বিষয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। চিঠি দেওয়ার পর বিএনপি থেকে কোনও সাড়া পাননি তিনি। এমনকি দলের অভ্যন্তরে মূল্যায়নধর্মী কোনও আলোচনাও হয়নি। ওই চিঠি দেওয়ার ছয় মাস পর শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে চা-চক্রে বসলেন খালেদা জিয়া।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচ জন ছিলাম। চা-চক্র হয়েছে। সাধারণ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত আলোচনা হয়েছে।’
আ ফ ম ইউসূফ হায়দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠক হয়েছে। আমি শুধু কথা শুনেছি। এ নিয়ে মহাসচিব বলতে পারবেন। তাকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি এসব বিষয়ে বলার মানুষ নই।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এসেছিলাম ব্যক্তিগত একটি কাজে। বিশেষ কোনও আলোচনা হয়নি।’
‘খালেদা জানতে চাইলেন কেন আসেন না’
চা-চক্রে অংশ নেওয়া ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটাকে বৈঠক বলা যায় না, চা-চক্র হয়েছে। তিনি চা পানের জন্য ডেকেছিলেন, আমরা চা উপভোগ করেছি।’
কেমন ছিল আলোচনা? জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যাডাম জানতে চাইলেন, ‘কেন আসেন না, খোঁজ-খবর নেন না।’ উত্তরে বলেছি, ‘আমাদের প্রয়োজন মনে করলে ডাকলে তো অবশ্যই আসব।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘আগেও যা বলেছি, এখনও তাই বলেছি। আমার অবস্থান আগের মতোই। ম্যাডামকে একজন নারী সেক্রেটারি নিয়োগ দিতে বলেছি। তিনি অফিস টাইম যেন পরিবর্তন করে এগিয়ে আনেন, নেতাকর্মীদের যেন আরও বেশি-বেশি ডাকেন, এসবও বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চা-কফির সঙ্গে খোশগল্প করেছি। তিনি কেমন আছেন, জানলাম।’
জানা গেছে, ‘কেন আসেন না’— খালেদা জিয়ার এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাকে বলেছেন, ‘কাজ-কাম নাই, তাই আসি না।’ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের এই প্রতিষ্ঠাতা বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘আশা আছে, পথে বের হওয়ার অনুরোধ করেছি ম্যাডামকে।’
চা-চক্রের বিষয়ে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী দিনের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। অনেক পরামর্শ এসেছে। পরামর্শগুলো নিয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

আরও পড়ুন-

নৌবাহিনীতে সাবমেরিন: কৌশলগতভাবে মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

যা আছে সাবমেরিন দু’টিতে

/টিআর/জেএইচ/