অলির সংবাদ সম্মেলন ফেসবুক লাইভে দেখলেন শীর্ষ জামায়াত নেতা

অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনে ফেসবুক লাইভ করেন এমন অনেকেই

এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা অংশগ্রহণ না করলেও ফেসবুক লাইভে সরাসরি যুক্ত ছিলেন দলটির একজন প্রভাবশালী নেতা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকালে রাজধানীর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার একজন সদস্যের তত্ত্বাবধানে লাইভে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। এলডিপির প্রভাবশালী এক নেতার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ওই নেতার নাম প্রকাশ করেনি সূত্রটি।

সূত্রের ভাষ্য, জামায়াতকে সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ উচ্চপর্যায়ে দিয়েছিলেন অলি আহমদ। দলটির পক্ষ থেকেও অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান ছিল। যদিও সংবাদ সম্মেলনের আগের দিন ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির মনোভাব বুঝতে পেরে জামায়াতের পরিচিত পর্যায়ের নেতারা এতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে অনুষ্ঠানে তারা সরাসরি উপস্থিত না হলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনটি ফেসবুক লাইভে দেখেন। অন্তত একজন শীর্ষনেতার এভাবে ফেসবুক লাইভে যুক্ত থাকার কথা নিশ্চিত করেছে এলডিপির ওই সূত্রটি। এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে দেখা গেছে, দর্শক আসনে থাকা জামায়াতের সদস্যদের অনেকেই ফেসবুকে লাইভ করে সেটি অন্যদের প্রদর্শন করছেন। 

এলডিপির প্রধান অলি আহমদ নিয়মিত জামায়াতের বিরোধিতা করে এলেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই। ওই মাসের ২ তারিখে অলি আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘জামায়াতের যারা এদেশে আছেন, তারা যদি এদেশের নাগরিক হন, তাহলে রাজনীতি করার অধিকার তাদের আছে। তাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে।’এরপর গত ১৫ মে এলডিপি আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন  জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার। শুক্রবার (১৭ মে) অলি আহমদের ইফতারে অংশ নেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম।

অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনে ফেসবুক লাইভ করেন এমন অনেকেই

বুধবার (২৬ জুন) জামায়াতের প্রভাবশালী একটি সূত্রের ইঙ্গিত ছিল, অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনে দলটির প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করার। যদিও বৃহস্পতিবার পাঠানো প্রতিনিধিদের কেউ-ই পরিচিতমুখ ছিলেন না।

এলডিপির ঘনিষ্ঠ সূত্রটির দাবি, জামায়াতের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেই জানানো হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধির প্রকাশ্য অনুপস্থিতি থাকলেও ফেসবুকে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত থাকবেন দলটির নেতারা।

বৃহস্পতিবার অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের পরিচিত পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাউকে দেখা না গেলেও সাধারণ নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের সঙ্গে যুক্ত, জামায়াতের কিছু নেতাকর্মীও অংশ নেন সংবাদ সম্মেলনে। যাদেরকে প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বসে থাকতে দেখা গেছে।

একসময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন এক ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আর্মির একজন সাবেক সেনা অফিসারের যে দলটি রয়েছে ২০ দলীয় জোটে, সেই দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুনর্বাসিত হয়েছেন। তাদের অনেককেই দেখা গেছে মিলনায়তনে। এই নেতাকর্মীদের সবাই জামায়াতের সদস্য পর্যায়ে ছিলেন।’

সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমও বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কেউ না এলেও সাধারণ কর্মীরা আছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ নিজেও জামায়াতের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের জামায়াত ও ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়, এমন মন্তব্যের পরে পুরো মিলনায়তন জুড়ে হাততালি পড়ে অন্তত দু’বার।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

আরও পড়ুন:

অলিকে সামনে রেখে জামায়াতের নতুন মিশন?

১৯৭১ আর ২০১৯-এর জামায়াত এক নয়: অলি আহমদ

অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত কর্মীরা

বিএনপিকে চাপে রাখতে কাদের পাশে পাচ্ছেন অলি?