‘চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে মন্ত্রণালয়ের এত মাথা ব্যথা কেন?’

জনস্বাস্থ্য নিয়ে অনলাইন আলোচনাকরোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনের তৈরি ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়াল দেওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এত মাথা ব্যথা কেন, এই প্রশ্ন তুলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে এক অনলাইন আলোচনায় এই প্রশ্ন তোলেন তিনি। ‘জনগণের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার রূপরেখা নিয়ে জনস্বাস্থ্য কনভেনশন-২০২০’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সবাই সম্প্রতি লক্ষ করেছি, চীন একটা ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়াল করতে চায়। অনুমতিও পেয়েছিল। দেশে যেকোনও গবেষণা করার অনুমতি দেওয়ার মালিক হচ্ছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। তাদের অনুমতিক্রমেই আইসিডিডিআরবি’র এই গবেষণাটা শুরু করার কথা। এখানে চক্রান্তটা বুঝতে হবে। আজ পুঁজিবাদ চাইছে তৃতীয় বিশ্বটাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে যাতে আমাদের অধিকারটা কাগজে-কলমে থাকে। আমাদের নিজেদের বিষয়টা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করি না। একটা ভ্যাকসিন গবেষণা হবে, এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এত মাথা ব্যথা কেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভূতের প্রবেশ ঘটেছে। চক্রান্তকারীদের প্রবেশ ঘটেছে।’   

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি অতীতে ইউরোপীয় কোম্পানির পক্ষে ভ্যাকসিন গবেষণা করেছে। তখন কিন্তু আপত্তি ওঠে নাই। আজ এখানে আপত্তিটা কেন? কারণ এখানে বিলিয়ন ডলারের ব্যাপার আছে। জনগণের স্বাস্থ্যের ব্যাপার আছে। এই ভ্যাকসিন ট্রায়াল যদি সফল হয়, তাহলে আমাদের এখানে বিরাট একটা অর্থ সাশ্রয় হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএমআরসি গবেষণার অনুমতি দিয়েছে। হঠাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেটাকে বন্ধ করে দিচ্ছে। এটাতে প্রমাণ হয় কী রকম চক্রান্তের দিকে আমরা যাচ্ছি। এখানে বিভিন্নভাবে তাদের চর, দালালরা অনুপ্রবেশ করেছে। যারা তৃতীয় বিশ্বের, বাংলাদেশের তো অবশ্যই স্বার্থবিরোধী। আমাদের জনগণকে বিষয়টা না বোঝাতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ওষুধের বাজারও বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে চীনের সহায়তা নিয়ে আমাদের দ্রুত অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।’ 

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা অনেকে জানি না, ভ্যাকসিন গবেষণা সময় সাপেক্ষ। অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু গবেষণা সাফল্যের উৎপাদন মূল্য খুবই কম। সুতরাং আজ আমাদের উচিত হবে চীনের এই গবেষণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া। এতে যদি আমরা সফল হই, তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি থাকতে পারে যে সফলতার ৫০ শতাংশের মালিক হবে বাংলাদেশ। জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে মানুষের জীবন আজ ভীষণ রকম হুমকির মুখে। বাংলাদেশে রাষ্ট্র যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের কল্পনায় মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব বেশি ছিল না। দেশের সংবিধানে চিকিৎসার বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি অনেক বড় ব্যাপার। সেই দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেটি উপেক্ষিতই আমরা দেখতে পারছি। মানুষ রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু মানুষ যেন রোগে আক্রান্ত না হয়, তার জন্য যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দরকার সেটি নেই। আমরা বায়ু দূষণ, পরিবেশ-প্রকৃতি দূষণে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। খাদ্য দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।’

গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন ড. আলী রিয়াজ, অধ্যাপক সাদাফ নূর প্রমুখ।