ঢাকা মহানগর আ.লীগ নতুন নেতৃত্ব পাবে কবে?

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। দলটির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই শাখা চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। উভয় কমিটির আওতাধীন ওয়ার্ড ও থানাগুলোর সম্মেলন হলেও দেওয়া হয়নি কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপের কারণে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দিতে বিলম্ব হচ্ছে, নগর কমিটির সম্মেলনও ঝুলে গেছে। ফলে নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকার্মীদের প্রশ্ন, কবে নতুন নেতৃত্ব পাবেন তারা।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। ওই দিন উভয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চার জনের নাম ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয় প্রায় এক বছর পর, ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত হয়নি। এর আগে ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এর তিন বছর পর দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়, ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল হয় আলাদা কমিটি।

নগরের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণ শাখার ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ঘোষণা করার পর মহানগরের সম্মেলন হবে। তবে কবে নাগাদ সম্মেলন হতে পারে, সে ব্যাপারে কোনও ধারণা নেই তাদের। বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার (৮ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই ভালো জানেন। তাকে জিজ্ঞেস করেন, ভালো বলতে পারবেন।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে বর্তমান কমিটি আগামী সম্মেলন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।

আওয়ামী লীগের দুই জন সাংগঠনিক সম্পাদক বলছেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার কথা ছিল। সে সময় তা হয়নি। এবার নির্বাচনি বছরে আর সম্মেলন হবে না। আগামী বছরের আগে সম্মেলনের আশা নেই। ফলে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড নতুন নেতৃত্ব পাচ্ছে না ২০২৩ সালেও। সে ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৪টি থানা, ৭৫টি ওয়ার্ড, ৫টি ইউনিয়ন এবং ৪০০টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিটগুলোতে প্রথমবারের মতো সম্মেলন করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। তবে সম্মেলন হলেও কোনও ওয়ার্ড ও থানায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। দক্ষিণের চেয়েও খারাপ অবস্থা ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের। এর অধীনে থাকা ৮০২টি ইউনিট, একটি ইউনিয়ন, ৬৪টি ওয়ার্ড ও ২৬টি থানায় সম্মেলন হলেও কোথাও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সম্মেলনে আগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় ৪৫ দিনের মধ্য নতুন কমিটি ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনও কারণে সেটি সম্ভব না হলে কেন্দ্রের কাছে কারণ ব্যাখ্যা করে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে হয়, সেটাও করেননি নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। সম্মেলন হওয়ার পর কোথাও বছর, কোথাও মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি দেওয়া হয়নি এখনও। ফলে বিলুপ্ত কমিটিগুলো নেতৃত্বশূন্য রয়েছে অনেকদিন ধরে। কবে নাগাদ নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে, সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না নগর নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউনিটগুলোর কমিটি হয়ে গেছে। ওয়ার্ড ও থানাগুলোর কমিটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।’ কবে নাগাদ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই বলতে পারবেন।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সব ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা শাখার সম্মেলন হয়েছে। আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনেকগুলো কমিটির নাম যাচাই-বাছাই করে আমরা একটা পর্যায়ে এসেছি। কমিটির খসড়া তৈরি হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও থানা শাখার কমিটি না দেওয়ায় বেশ কয়েকটি যৌথসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা বারবার দ্রুত কমিটি দেওয়ার তাগিদ দেওয়ার পরও কোনও কাজে আসছে না। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ২০ মার্চের মধ্যে কমিটি ঘোষণার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই সময়ও পেরিয়ে গেছে, হয়নি কমিটি।

সবশেষ গত ১ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভায় এ নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে ২০ মার্চের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি না দেওয়ায় উষ্ণা প্রকাশ করেন তিনি। এসময় নগর নেতারা সময় চাইলে তাতে সম্মতি দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটির খসড়া প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

কেন কমিটি দিতে এত বিলম্ব হচ্ছে, জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতার একজন বলেন, আমরা তো যথারীতি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা শাখার সম্মেলন করেছি। কমিটি ঘোষণা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতার কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসাতে চান। বলয়মুক্ত কমিটি দেওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য জটিলতা দেখা দেওয়ায় কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে।