আলহামদুলিল্লাহ সব ঠিকঠাক আছে: খালেদা জিয়ার চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী

করোনায় আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি ঠিকঠাক আছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু ঠিক-ঠাক মতোই হচ্ছে।’

শনিবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১১ টার দিকে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এরআগে, রাত পৌনে ১০টার দিকে চিকিৎসক টিমের সদস্যরা বিএনপিপ্রধানের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।

কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার নবম দিন চলছে খালেদা জিয়ার। এ প্রসঙ্গে ডা. সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা যে সিটিস্ক্যান ও অন্যান্য পরীক্ষাগুলো করেছি, সেগুলোর রিপোর্ট নিয়ে বসেছি। তো আজকে আমরা দেখলাম সেই টেম্পারেচারের প্যাটার্নটা কমে এসেছে। গতকাল যেমন সারাদিন ও সন্ধ্যার পর পর্যন্ত জ্বর ছিল, আজ সারাদিন জ্বর আসেনি। সন্ধ্যার পর থেকে কিছুটা জ্বর এসেছে, আমরা এখন মেপে এসেছি সেটা ১০০.২। তো আমরা যে নতুন অ্যান্টি ভাইরাস ওষুধ শুরু করেছি, সেটা আজ তৃতীয় দিন হবে। ইতোমধ্যে উনি দুটি ডোজ পেয়েছেন। মনে হচ্ছে সেটার রেস্পন্স ভালো পাচ্ছি।’

খালেদা জিয়ার পালস, ব্লাড প্রেশার, স্যাচুরেশন ভালো আছে বলেও জানান ডা. এফ এম সিদ্দিকী।

গত ১১ এপ্রিল করোনা টেস্ট পজিটিভ আসে খালেদা জিয়ার। এর আগে থেকেই বিএনপির নীতিনির্ধারক ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে চিকিৎসার বিষয়টি পরিকল্পনা করছিলেন। পরদিন অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তারা জানান, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি স্থিতিশীল। একইসঙ্গে তারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।

এরপর ১৫ এপ্রিল ডা. এফ এম সিদ্দিকী জানান, করোনা আক্রান্ত হিসেবে দ্বিতীয় সপ্তাহ খুব জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তারা খালেদা জিয়ার সিটিস্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই সিদ্ধান্ত জানানোর পর রাতেই এভারকেয়ারে সিটিস্ক্যান করান বিএনপি প্রধান। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) মধ্যরাতে হাতে পাওয়া মাত্রই চিকিৎসকরা আবারও পর্যালোচনা শুরু করেন এবং নতুন ওষুধ যুক্ত করেন।

গুলশানে সাংবাদিকদের সামনে এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে যে আজকে নবম দিন। অর্থাৎ দ্বিতীয় সপ্তাহের জটিল সময়টা পার করছি। এর মধ্যে কখনও কোনও জটিলতার লক্ষণ বা বিপদ সংকেত যদি আমরা পাই, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো। এই পুরো সপ্তাহ না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনও অবস্থাতেই শিথিলতা দেখা দেবে না। আমরা যেভাবে তাকে প্রথম থেকে ক্লোজ মনিটর করে যাচ্ছিলাম, সেভাবেই আমরা মনিটরিং চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা চালিয়ে যাবো।’

চিকিৎসক সিদ্দিকী বলেন, ‘ম্যাডামের শরীর স্ট্যাবল আছে। সব দিক দিয়ে স্থিতিশীল আছে বলেই মনে হচ্ছে।’

সিটিস্ক্যান রিপোর্ট প্রসঙ্গ ডা. সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা পেয়েছি যে খুব, ন্যুনতম ইনভলভমেন্ট আছে, খুবই কম। আমরা সবাই করোনা ট্রিটমেন্ট পেশেন্টের সঙ্গে জড়িত। আমরা গত এক বছর ধরে শত-শত রোগী দেখেছি। প্রথম সপ্তাহ শেষেই ৩০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ, ৬০ শতাংশ ইনভলভমেন্ট হয়ে যায়। পেশেন্ট কিছু বোঝার আগেই সিরিয়াস ইনভলভমেন্ট হয়ে যায়। সে তুলনায় আলহামদুলিল্লাহ্, বলা যায় যে, ওই ধরনের ইনভলভমেন্ট তো নাইই, বরং খুব উন্নত আছে।’

এসময় তার সঙ্গে অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. মামুন ও চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা (কারাদণ্ড) হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার ছয় মাসের মুক্তি হয়। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির সময় আরও ছয় মাস বাড়ায় সরকার। এ বছরের মার্চে তৃতীয়বারের মতো ছয় মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

আরও পড়ুন:

‘খালেদা জিয়া বলেছেন সবার প্রপারলি মাস্ক পরা উচিত’