স্থায়ী কমিটির বৈঠক

জোট নিয়ে বিএনপিতে মতভেদ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট অব্যাহত রাখার বিষয়ে মতভেদ তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ-কেউ জোটের পক্ষে অবস্থান নিলেও অধিকাংশ ‘একক রাজনৈতিক’ শক্তি গড়ে তোলার পক্ষে। আর এ নিয়েই শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠকে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত তিন সদস্যের সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের আলাপ হয়। তাদের বক্তব্যেও জোট রাজনীতির লাভ-লোকসানের প্রসঙ্গটি উঠে আসে।

স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে কয়েকটি বিষয় আলোচনা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—জোট রাজনীতির ভবিষ্যৎ ও লাভক্ষতি, আগামী দিনের নির্বাচনি কর্মকৌশল, জিয়াউর রহমানকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং করোনা সিচুয়েশন।

এক্ষেত্রে জোট প্রসঙ্গটিই উত্তাপ ছড়ায় বৈঠকে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন,‘বিএনপি আগামী দিনের নির্বাচনি কৌশল ঠিক করছে। এরমধ্যে বিগত সময়ের মতো মাঝামাঝি কোনও অবস্থা নেই। এবারের অবস্থা—ডু অর ডাই’।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কাঠামোর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক লাভ নেই বিএনপির। দলের একক সক্রিয়তাই এখন মুখ্য। কোনও-কোনও সদস্য মনে করেন, জোট রাজনীতি দরকার।’

একাধিক সদস্য জানান, অধিকাংশ সদস্য বিএনপিকে একলা চলার পক্ষে মত দেন। বিশেষ করে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এখনও রাজনৈতিকভাবে বিএনপিই একমাত্র সক্ষম শক্তি। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান জোট কাঠামো ধরে রেখে জনগণের সামনে নতুন কোনও বার্তা দেওয়া সম্ভব নয়। আর বিএনপি সক্রিয় হলে অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও একইপথে হাঁটবে, এমন পর্যালোচনা রয়েছে বিএনপিতে।

কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা কোনও জোটই ফরমালি ভাঙবো না। যারা যাওয়ার নিজে থেকেই যাবে। বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি দেবে। বিশেষ করে দলীয় ‘শক্তি’ দেখাতে হবে। আর সবাই বিশ্বাস করে, আন্দোলন বিএনপিকে ছাড়া হবে না।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জোটে তো অনেক রাজনৈতিক দল আছে। থাকুক না, মন্দ কী। আর  এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আলোচনা করে আসবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটি নিয়মিত বৈঠক করে। শনিবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।’

কমিটির একাধিক সদস্য মনে করেন, আগামী নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নিশ্চিত করতে বিএনপিকেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর এটাতে বিএনপিকেই আগে মাঠে নামতে হবে। 

একজন সদস্য জানান, জোটের বিষয়ে আগামী শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) স্থায়ী কমিটির পরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

তবে, আরেক সদস্য বলেন, ‘ক্ষমতায় তো যেতে পারছে না বিএনপি। তাহলে জোট ভেঙে কী হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জোট রাখা বা না রাখার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করছি, রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে কবে সিদ্ধান্ত আসবে।