আগামী ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের জায়গা নিয়ে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতার প্রকাশ্য বার্তা দেওয়া হলেও একদিনের মাথায় তা রূপ নিয়েছে সংঘর্ষে। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টা থেকে রাজধানীর নয়া পল্টনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলিতে একজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। আটক ও গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র অন্তত ছয় জন নেতা। সন্ধ্যার দিকে পুলিশের একটি দল ঢুকে পড়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
চারঘণ্টা পর বুধবার রাত ১০টার দিকে অভিযান শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএনপির অফিসে বস্তায় বস্তায় ককটেল মিলেছে। যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযান চলাকালেই বলেছেন, ‘ব্যাগে করে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি পুলিশ (বিএনপির) কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে গেছে।’ রাত ৮টার দিকে তিনি নয়া পল্টন থেকে চলে যান।
বুধবার বিকাল থেকে রাত অবধি সহিংস ঘটনার পর বিএনপির পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে দলটির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের আলাপ হয়। তারা জানান, মূলত পুলিশের পক্ষ থেকে আগ বাড়িয়ে নেতাকর্মীদের উসকানি দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, নয়া পল্টনের ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে।
দলের নেতারা জানান, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। তারা আরও জানান, শনিবারের সমাবেশ বানচাল করার উদ্দেশ্যেই বুধবারের হামলা। তবে সমাবেশের স্থান নিয়ে নয়া পল্টনের বিকল্প চেয়ে আবারও আহ্বান জানাবেন বিএনপির মহাসচিব। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় গ্রহণযোগ্য কোনও ভেন্যু যদি না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে নয়া পল্টনেই সমাবেশ করবে বিএনপি বলে জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। এতে যদি প্রশাসন বাধা দেয়, সেক্ষেত্রে বুধবারের মতোই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে—এমন সম্ভাবনার কথাও জানান একাধিক সিনিয়র নেতা।
পুলিশের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজকে সম্পূর্ণ নিরপরাধ পরিস্থিতিতে উসকানি দিয়ে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বিএনপির মতো একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে তছনছ করেছে, সব ফাইলপত্র নিয়ে গেছে। লাইট ভেঙে দিয়েছে। কম্পিউটার ভেঙেছে। মেইন সুইচ ভেঙেছে। এককথায় লুটপাট করেছে।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় হোটেল লেকশোরে সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি মহাসচিব। এতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও অংশগ্রহণ করবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সংবাদ সম্মেলন থেকে নতুন কর্মসূচি দেবেন বিএনপি মহাসচিব। এতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও শনিবারের সমাবেশ নিয়ে কথা বলবেন তিনি।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বুধবার বিএনপি সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল। আগামী দিনে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে বিএনপির নেতৃত্বের ওপর—এমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন একাধিক দলের শীর্ষ নেতা।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম