রাষ্ট্র এখন পুরোপুরিভাবে যন্ত্রণার কারখানা: মির্জা ফখরুল

রাষ্ট্র এখন আর রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্র এখন পুরোপুরি একটা যন্ত্রণা, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের কারখানা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্র এখন আর রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্র এখন পুরোপুরি একটা যন্ত্রণা, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের কারখানা হয়ে গেছে। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তখন সফল হতে পারে, যখন এটার তিনটা স্তম্ভই কাজ করতে পারে। যেখানে পুরো তিনটা স্তম্ভই তারা (বর্তমান সরকার) দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের আত্মাটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যে আত্মাটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, কাজ করেছি, লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি; আমাদের সে আত্মা বিনষ্ট করে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আজ অনেকেই বলেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে কি নেই তা জানি না, কিন্তু যারা বিচারক, তারাই সেই স্বাধীনতাটাকে ধ্বংস করছেন। বড় বড় পত্রিকার এডিটর, চ্যানেলের এডিটররা আজ কী ভূমিকা পালন করছেন? এখানে অনেক সাংবাদিক উপস্থিত আছেন, তারা আমাদের থেকে কম জানেন না।

আমরা সবাই ঘোর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি মন্তব্য করে মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার সময় যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তখনও কল্পনা করিনি এমন একটি সময় আমরা দেখবো। আজ গণমাধ্যমও ভাগ হয়েছে। একদিকে রয়েছে ভয়াবহ সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী, আরেক দিকে রয়েছে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম। যারা সংগ্রামে আছেন, তারা আজ নিগৃহীত। তাদের অনেকের আজ চাকরি নেই, সত্য বলার অপরাধে অনেক গণমাধ্যম আজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান দেশছাড়া।

তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে ঈশ্বরগঞ্জে ৩০ বছর আগের মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাবেক এমপি হাবিবকে ৭০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে বিচারের নামে চলছে অবিচার। আর এ থেকে আমাদের মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতিকে রক্ষা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন, তারেক রহমান নির্বাসিত থেকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবাই মিলে আসুন এই দানবীয় সরকারকে বিদায় করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে এখন যেটা দাঁড়িয়েছে যে সরকার একটা নির্দিষ্ট বয়ান হাজির করছে, তার বিরুদ্ধে গেলে সেটা আইনিভাবে একটা অপরাধ। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা এখন আইনিভাবে অপরাধ, সেটা কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতির মুখোমুখি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন লড়ছি, তখন আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিটা কী? আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তি হচ্ছে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারছি না। সেখানে বিচার বিভাগকে তার সর্বোচ্চ স্বাধীনতার জায়গায় এবং গণমাধ্যমকে তার সর্বোচ্চ স্বাধীনতার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। আমরা যত বেশি এই কর্মসূচিকে মানুষের সামনে হাজির রাখতে পারবো, যত বেশি এই কর্মসূচির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো, তত মানুষের ওই স্বপ্ন তৈরি হবে যে স্বপ্নকে আদায় করতে মানুষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপি নেতা অধ্যাপক হাসান মুর্শেদ খান, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।