অক্টোবরের শেষে বিএনপি-বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশ, আসবে টানা কর্মসূচি

সরকার পতনের দাবিতে আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। ১৮ অক্টোবর ঢাকার জনসমাবেশ থেকে আল্টিমেটামসহ পরবর্তী মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি হবে ঢাকায়।

চলতি অক্টোবরের একেবারে শেষ দিকে এই কর্মসূচি পালনের  সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত বিরোধী দলগুলো। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন ছয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—  আগামী ৭ অক্টোবর ঢাকায় শিক্ষক সমাবেশ, ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা-মহানগরে সমাবেশে ও মিছিল, ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন, ১৪ অক্টোবর খালেদা জিয়ার ইস্যুতে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-মহানগরে অনশন, ১৬ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জনসমাবেশ।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বলছেন, এসব কর্মসূচির পালনের পর ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর দুর্গাপূজার উৎসব রয়েছে। বিএনপি এই ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে কর্মসূচি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৮ অক্টোবরের যুগপৎ জনসমাবেশ থেকে আল্টিমেটাম বা কিছু দিনের সময় দিয়ে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেবে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল। সেই মহাসমাবেশ থেকেই সরকার পতনের টানা কর্মসূচি হাতে নেবে বিরোধী দলগুলো। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা অভিমুখে রোডমার্চ, অবরোধ ইত্যাদি।

এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষের সব ক্ষোভের সীমা অতিক্রম করেছে। মানুষ এখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে চূড়ান্ত কর্মসূচি আশা করছে। এই প্রত্যাশাকে বিবেচনায় রেখে কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন রাজনীতিকরা।’

বৃহস্পতিবার রোডমার্চ শেষে চট্টগ্রামে বিএনপির জনসভাবিরোধী দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, ১৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর পূজার কারণে কয়েকদিনের বিরতি থাকায় দলীয় নেতাকর্মী, অনুসারীদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য আবারও ঢাকামুখী কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে মহাসমাবেশ করা হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে জানান, মহাসমাবেশ থেকে তফসিলকে কেন্দ্র করে এর আগে ও পরের পুরো সময়টিতে টানা কর্মসূচি দেওয়া হবে। এটাই হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি।

বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, তারা ধারণা করছেন, অক্টোবরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশকে করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিতে পারে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার বাড়তি নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

যদিও এই ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা। তাদের ভাষ্য, মহাসমাবেশ থেকে বসে পড়ার কোনও প্ল্যান নেই, বরং শান্তিপূর্ণ অবরোধ-ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে টানা। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ নির্দেশনা রয়েছে।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৮ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে। ২০-২৪ অক্টোবর হয়তো বা আল্টিমেটাম দিতে পারি। সেক্ষেত্রে ২৪ অক্টোবর থেকে মওলানা ভাসানীর প্রদর্শিত পথে কর্মসূচি শুরু হবে।’

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের একাধিক ছাত্রনেতা উল্লেখ করেন, ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন অনুষ্ঠিত হলে পূজার পর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কর্মসূচি দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নিতে পারেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের সব ফর্ম ব্যবহার করবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে দলের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চূড়ান্ত কর্মসূচি বলে রাজনীতিতে কিছু নেই। এটার অর্থ আমি বুঝি না। চূড়ান্ত কিছু কবে আসবে, কবে হবে, এসব তো দিনক্ষণ বলেকয়ে আসে না। কাল সকালেও চূড়ান্ত হতে পারে।’

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু আরও বলেন, ‘আজকে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্ড লাখ লাখ জনতা অংশ নিয়েছে। আমরা খুব সাকসেসফুলি রোডমার্চ করেছি। ফলে, যখন যেটার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে, আমরা সেভাবেই কর্মসূচি প্রণয়ন করবো। আপাতত যেটুকু মনে করেছি, এ পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।’